আলোর নিচে অন্ধকার, বঞ্চিত সীমান্তের খাসিয়ারা
কমলগঞ্জ সংবাদদাতা
কমলগঞ্জ সীমান্তের ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আদমপুর বনবিট এলাকায় অবস্থান কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির। ৯৫টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে এই খাসিয়া পুঞ্জিটি। বাইরের বস্তি এলাকায় অন্তত ৬০টি পরিবার নিয়ে রয়েছে কালেঞ্জি গ্রাম। তথ্যপ্রযুক্তিসহ দেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নানাবিধ সমস্যায় জর্জিত খাসিয়ারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আধুনিকতার ছোঁয়া তাদের কাছে এখনও দুর্লব।
চার বছর আগে এ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করা হলেও ওই কালেঞ্জি পুঞ্জি এবং গামের বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত না হওয়ায় প্রায় দেড়শ পরিবারের সহস্রাধিক লোক সভ্যতার এই আবশ্যক শক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত না হওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির চর্চায়ও বহু পিছিয়ে রয়েছে এখানকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া যাতায়াতের দুরবস্থা, রাস্তা ও কালভার্ট না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত কালেঞ্জি ও খাসিয়া পুঞ্জির সদস্যরা।
আদমপুর বনবিট ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৫০০ ফুট ওপরে পাহাড়ি টিলার স্তরে স্তরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। আঁকাবাঁকা পথে ১৫২টি সিড়ি বেয়ে টিলার ওপরে থাকা পুঞ্জির হেডম্যানসহ অন্যদের বাসায় পৌঁছতে হয়। খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬০০। তাদের আয়ের প্রধান উৎস জুমের খাসিয়া পান ও লেবু। পুঞ্জির পার্শ্ববর্তী কালেঞ্জি গামের ৫০টি পরিবারের প্রায় অর্ধসহস্রাধিক লোকেরও রয়েছে নানা ভোগান্তি।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করার চার বছরেও এই দুটি গাম বিদ্যুতায়নের আওতায় আসেনি। কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারের দৈনন্দিন নানা সমস্যায় জর্জরিত পুঞ্জির সদস্যরা। বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দুটি গামে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হচ্ছে না। পুঞ্জির নারী-পুরুষ সদস্যরা টিলার নিচের কূপ থেকে পানি সংগহ করে টিলার ওপরে তুলে নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ সুবিধা থাকলে পাম্পের মাধ্যমে টিলার ওপরে সহজে পানি তুলতে পারতেন তারা।
যাতায়াত ব্যবস্থার কারণেও কালেঞ্জি খাসিয়া সম্প্রদায় ও কালেঞ্জি গামের লোকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আদমপুর বাজার থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সংরক্ষিত বনের মাঝে কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও পুঞ্জিঘেঁষা কালেঞ্জি গাম। সেখান থেকে চলাচলের পথ দুর্গম। বৈরী আবহাওয়া ও বর্ষায় এসব পথে চলাচলে তাদের ভোগান্তি বহু গুণ বেড়ে যায়।
খাসিয়া সদস্যদের আয়ের প্রধান উৎস পাহাড়ি টিলায় জুমের পান। খাসিয়া পান বৃহত্তর সিলেটের ভাটি অঞ্চল ও যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হয়।
কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দা ওয়ানবর সুটিং জানান, পুঞ্জির স্কুল-কলেজ পড়ুয়া প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী বেশির ভাগ সময় হেঁটে ৯ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দেয় আদমপুরে যেতে। সেখান থেকে গাড়িতে কলেজে যেতে হয়। যাতায়াতের দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে খাসিয়া পরিবারগুলো দৈনন্দিন কাজে আদমপুর বাজারে যাতায়াত করে। এ ছাড়া জুমের উৎপাদিত পান পরিবহন ও বিপণনেও সমস্যা হয় তাদের।
আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন জানান, আদমপুর বনবিট অফিস থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হয়ে গেলে এই পুঞ্জির যাতায়াত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের নজরে রয়েছে এবং নিজেও চেষ্টা করছেন বলে জানান। তবে বিদ্যুতায়নের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মীর গোলাম ফারুক জানান, এ দুটি এলাকা সংরক্ষিত বনের আওতায় থাকায় বন বিভাগের বিধিনিষেধ মেনে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে ওই এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।