
সিলেটের গোয়াইনঘাটে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সহায় সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চৈলাখেল ৮ম খন্ড গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদের সঞ্চিত টাকায় কেনা বাড়ি ও ১২১ শতাংশ ভূমি জোরপূর্বক নিজেদেরে দখলে রেখে বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছে জবর দখলকারীরা। এসব ভূমিতে সবুজায়নসহ ভবিষ্যত প্রয়োজনে রোপিত গাছপালাও কেটে বিক্রি করেছে তাঁরা।
স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের হস্তক্ষেপেও দখল ছাড়ছেনা জবরদখলকারীরা। স্থানীয় প্রশাসনিকভাবে তদন্তেও উক্ত ভূমির বৈধ মালিক হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ প্রমাণিত হয়েছেন। বয়সের ভারে নূজ্য অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ এ ব্যাপারে আদালতে স্বত ও উচ্ছেদ মোকাদ্দমা করলেও বিাবদী পক্ষের কৌশলী কালক্ষেপণ করে বার বার সময় প্রার্থনায় বিচারের রায়ও বিলম্বিত হচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ বর্তমানে নানা রোগে ভোগছেন। পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। চিকিৎসা ও পারিবারিক প্রয়োজনে নিজের ক্রয়কৃত ভূমি থেকে কিছু অংশ বিক্রির চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হচ্ছে না প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে।
দখলে রাখা ভূমি নিজেদের দাবি করে বিবাদীদের তরফে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে আদালত ও থানায় একাধিক দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা করলেও দলিলসহ সঠিক তথ্য প্রমাণাধী না থাকায় আদালত কর্তৃক এসব মামলা সমুহ খারিজ ও নথিজাত হয়েছে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বর্তমানে আদালতের বারান্দায় মাসের পর মাস হাজিরা দিয়ে সময় পার করছেন মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ।
জানা যায়, ১৯৮০ সালের ১৫ এপ্রিল রেজিষ্টারী সাফকবালা ১৩৯২৬ নং দলিলমূলে চৈলাখেল ৮ম খন্ড মৌজার এসএ জেলএল নং ১১০, বিএস খতিয়ান নং ৩১৪, এসএ দাগ ২৭০, ২৬৮, ২৬৯, বিএস দাগ নং ৬৯১, দাগ নং ৬৬৬ বাড়ি শ্রেণিতে ১১৩ ও জেএল নং বিএস ৮৮, বিএস খতিয়ান নং ১২৭, দাগ নং ৬৬৫এ ০৮ শতাংশ ভূমির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ।
কৃষক পরিবারের সদস্য হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ ব্যবসাও করতেন। ব্যবসা করে তার সারা জীবনের সঞ্চিত টাকা দিয়ে তিনি স্ত্রী সন্তানের সুখের জন্য উপরোক্ত সম্পদ ক্রয় করেন। স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের লোকজনকে রেখে একবার তিনি ভারতের আসামে বেড়াতে যান। সেখানে মাস ছয়েক থাকার পরে দেশে ফিরে এসে দেখেন তার জমি দখল করে প্রতিবেশি ফরিদ মিয়া ও বাচ্চু মিয়াসহ কতিপয় লোকজন বসতভিটে বানিয়ে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ তার জমি দখল করে বসতঘর করার কারণ জানতে চাইলে জবর দখলকারীরা জানান, তারা অন্যত্র জমি কিনে অচিরেই চলে যাবে। পরবর্তীতে বার বার কালক্ষেপন করে দখলকৃত ভূমি ছাড়েনি।
সরজমিনে রোববার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চৈলাখেল ৮মখন্ডের লাখেরপার গ্রামে গেলে স্থানীয়রাও জবরদখলকৃত জমি মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদের বলে নিশ্চিত করেন।
একই গ্রামের মুরুব্বি সুরুজ আলী জানান, কোন ধরণের বৈধ কাগজপত্রাধি নেই অথচ গায়ের জোরে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভূমি দখল করে বসবাস করে যাচ্ছে কতিপয় লোকজন। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের সম্ভাবনা দেখছিনা।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হায়দার হোসেন জানান, আইন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফরিদ মিয়া, বাচ্চু মিয়া ও পরবতীতে তাদের সন্তানরা জোরপূর্বকভাবে একটি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমিজমা দখল করে রেখেছে। স্বাধীন সভ্য একটি রাষ্ট্রে এটা কাম্য হতে পারেনা। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদের বেদখলকৃত ভূমি উদ্ধারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কথা হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ জানান, ফরিদ মিয়া ও বাচ্চু মিয়াগংরা আমার ক্রয়কৃত ভূমি দখল করে বসবাস করে আসছে। জোরপূর্বক ঘরবাড়ি বানিয়ে ক্ষতিসাধন করে আসছে, বিষয়টি নিয়ে আমি আদালতে স্বত্ব ও উচ্ছেদ আইনে মামলা করেছি। জবরদখলকারীদের কাছে জমিজমা থাকায় বিক্রি করতে পারি না। সম্পদ থাকা সত্ত্বেয় অভাব অনটনে চলছে আমার পরিবার। বর্তমানে অনেকটা চিকিৎসাহীন, মানবেতরভাবে বেঁচে আছি।
সরজমিন পরিদর্শনকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদের ভূমি দখল করে বসবাসকারী দেলোয়ারা বেগম, রহিমা বেগম জানান, এসব জমি আমাদের, জমির কাগজও আছে। মুখে এসব জমির দলিলসহ কাগজপত্রাদি আছে দাবি করলেও তার কোন কপি প্রদর্শন করতে পারেননি তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন অধিকারী জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদের ভূমি দখলের বিষয়টি জেনেছি, এটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে আদালতে উচ্ছেদ মামলা চলমান। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিষয়টি মাননীয় আদালত দ্বারা মিমাংসা হবে।