
হাফেজ তাহমীদ তামীম। দীর্ঘ ১০বছর যাবত তারাবির নামাজে তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে ইমামতি করে আসছেন। সিলেট নগরীর দারুসসালাম মাদরাসার সহকারী শায়খুল হাদীস ও প্রধান শিক্ষা সচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা মাশুক আহমদ সালাম এর ছেলে হাফেজ তাহমীদ তামীম। খতমে তারাবিতে তার তেলাওয়াতের মাধুর্যে ও কুরআন তেলাওয়াতের সুর মুসল্লিদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলছে।
হাফেজ তাহমীদ তামীম এর তারাবির ইমামতির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে সিলেট নগরের হাওয়াপাড়ার আর্ক টাওয়ার মসজিদ থেকে। এরপর পরবর্তী পাঁচটি বছরের রমজান কেটেছে নগরীর লালবাজারস্থ আল-ফালাহ টাওয়ার মসজিদে।
পবিত্র রমাজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। হেরা গুহায় রবের ধ্যানে মগ্ন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ঠিক সেই মুহুর্তে মানবতার মুক্তির বার্তা ও পথপ্রদর্শনের গাইডলাইনের রূপরেখা হিসেবে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা আলাকের প্রথম পাঁচখানা আয়াত নিয়ে নবীর কাছে আসলেন ওহীর বার্তাবাহক ফেরেস্তা হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম। এই হেরা গুহা থেকে বিশ্ব মানবতার পথের দিশারী, ঐশীগ্রন্থ আল কুরআন নাজিলের শুভসূচনা হলো।
কিন্তু কুরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কোনো মিথ্যা এর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। না এর সম্মুখ থেকে না পেছন থেকে। (সূরা হা মীম সাজদাহ: ৪২)। মূলত আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন হেফাজত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বলেছেন: তোমরা আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ এই কোরআন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)।
কুরআনকে বক্ষে ধারণ করে যুগযুগ ধরে মুসলমানরা হাফেজ হচ্ছেন। কুরআন নাজিলের মাস রমজানে এর চর্চা যেনো বাকি ১১মাসের তুলনায় বেড়ে যায় দ্বীগুন। মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজের মাধ্যমে খতমে কুরআনের চর্চা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনপ্রমী হতে উৎসাহিত করে।
রোজায় কুরআনের সুর বাঁজে মুমিনের ঘরে ঘরে। তারাবির নামাযে পঠিত হয় কুরআন। পহেলা রোযা থেকে একাধারে ২৭ রোযা পর্যন্ত সিলেটের সকল মসজিদে মসজিদে হাফেযে কুরআনদের কণ্ঠে ধ্বণীত ঞয় ঐশীবাণী মহাগ্রন্থ কুরআনের বাণী। শীতল হয় মুসল্লিদের হৃদয়। এসকল হাফেযে কুরআনদের খেদমতে মুসল্লিরা মহান আল্লাহকে পাওযার আশায় থাকেন। মাহে রমজানজুড়ে দৈনিক শ্যামল সিলেটের বিশেষ আয়োজন ‘আলোর পরশমণি’তে আজ স্থান পেয়েছে হাফেজ হাফেজ তাহমীদ তামীম এর কথা।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির সময় যখন অধিকাংশ মসজিদে তারাবির জামাত সীমিত করা হয়, তখন তিনি নিজ বাসায় বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খতমে তারাবির নামাজ আদায় করেন। এরপর টিলাগড় ইকোপার্ক দারুর রাহমাহ জামে মসজিদে এক বছর তারাবীহের নামাজ পড়ান। এরপরের দুই বছর উত্তর টিলাগড় বাগমারা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে পবিত্র তারাবীহের নামাজে ইমামতি করেন। এবছর আবারও টিলাগড় ইকোপার্ক দারুর রাহমাহ জামে মসজিদে তারাবির ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৫ সালে সিলেটের নগরীর জামেয়া দারুসসালাম খাসদবীর থেকে কুরআনের হিফজের সবক শেষ করেন। সেই বছরের রমজান মাস থেকেই তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন। পরবর্তী বছর ২০১৬ সালে তাকমিল ফিল হিফজ সম্পন্ন করে বেফাক বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জামেয়া দারুসসালাম মাদ্রাসা থেকেই তাকমিল ফিল হাদিস সম্পন্ন করেন, যা তার ইসলামী শিক্ষার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
শৈশব থেকেই পিতার সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে হাফেজ তাহমিদ তামীম ইসলামী শিক্ষা ও কুরআনের সুশোভিত পথকে নিজের জীবনের মূল আলো হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
তারাবির নামাজের ইমামতির অনুভূতি জানতে চাইলে হাফেজ তাহমীদ তামীম বলেন, তারাবিহের নামাজে ইমামতি করা মানে শুধু নামাজ পড়ানো নয়, বরং পুরো মসজিদের মুসল্লিদের সঙ্গে এক আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হওয়া। প্রতিদিন নামাজ শেষে মুসল্লিদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অনুভব করি।
হাফেজ তাহমীদ তামীম তার আগামী দিনের পথচলা যেন কুরআনের আলোয় আলোকিত থাকে, সে জন্য তিনি সকলের দোয়া কামনা করেছেন। আল্লাহ যেন তাকে দ্বীনের খেদমত করার আরও বেশি সুযোগ দেন, তার কণ্ঠের তেলাওয়াত যেন আরও অধিক মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়, এবং তিনি যেন ইসলামের আলো ছড়িয়ে যেতে পারেন—এ কামনায় তিনি সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন