
হাফিজ মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন একাধারে শিক্ষক ও দাঈ। ২০০৫ সালে পবিত্র কুরআনুল কারীমের হিফজ শেষ করার পর থেকে প্রতি রমজানেই তিনি তারাবির নামাজে ইমামতি করছেন। তাঁর চলাফেরা ও বিনয়ী স্বভাবের কারণে মুসল্লিদের প্রিয়ভাজন হয়েছেন। সিলেট নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সোনারপাড়া এলাকার মরহুম হাবিবুর রহমান সফিক এর ছেলে তিনি।
হাফেজ মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন লেখাপড়ার শুরু সিলেট নগরীর জামিয়া হাতিমিয়া হাফিযিয়া শিবগঞ্জ মাদরাসায় কিতাব বিভাগ থেকে। ইবতেদায়ী ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত পড়ার নগরীর ঝেরঝেরি পাড়া মাদরাসায় হিফজের সবক শুরু করেন। ২০০৫ সালে জামেয়া ইসলামিয়া হাফিজিয়া বহরগ্রাম মাদরাসা থেকে তাহফিযুল কুরআনুল কারীমের তাকমিল বিভাগের বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতীত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি নগরীর জামিয়া হাতিমিয়া হাফিযিয়া শিবগঞ্জ মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে দ্বীনের খেদমতে আছেন।
পবিত্র রমাজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। হেরা গুহায় রবের ধ্যানে মগ্ন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ঠিক সেই মুহুর্তে মানবতার মুক্তির বার্তা ও পথপ্রদর্শনের গাইডলাইনের রূপরেখা হিসেবে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা আলাকের প্রথম পাঁচখানা আয়াত নিয়ে নবীর কাছে আসলেন ওহীর বার্তাবাহক ফেরেস্তা হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম। এই হেরা গুহা থেকে বিশ্ব মানবতার পথের দিশারী, ঐশীগ্রন্থ আল কুরআন নাজিলের শুভসূচনা হলো।
কিন্তু কুরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কোনো মিথ্যা এর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। না এর সম্মুখ থেকে না পেছন থেকে। (সূরা হা মীম সাজদাহ: ৪২)। মূলত আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন হেফাজত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বলেছেন: তোমরা আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ এই কোরআন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)।
কুরআনকে বক্ষে ধারণ করে যুগযুগ ধরে মুসলমানরা হাফেজ হচ্ছেন। কুরআন নাজিলের মাস রমজানে এর চর্চা যেনো বাকি ১১মাসের তুলনায় বেড়ে যায় দ্বীগুন। মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজের মাধ্যমে খতমে কুরআনের চর্চা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনপ্রমী হতে উৎসাহিত করে।
রোজায় কুরআনের সুর বাঁজে মুমিনের ঘরে ঘরে। তারাবির নামাযে পঠিত হয় কুরআন। পহেলা রোযা থেকে একাধারে ২৭ রোযা পর্যন্ত সিলেটের সকল মসজিদে মসজিদে হাফেযে কুরআনদের কণ্ঠে ধ্বণীত হয় ঐশীবাণী মহাগ্রন্থ কুরআনের বাণী। শীতল হয় মুসল্লিদের হৃদয়। এসকল হাফেযে কুরআনদের খেদমতে মুসল্লিরা মহান আল্লাহকে পাওযার আশায় থাকেন।
হাফেজ মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন হিফয শেষ করে সর্বপ্রথম নগরীর রায়নগর সোনারপাড়াস্থ হাজি কামাল এর বাসায় মহিলা তারাবির নামাজ ইমামতি করেন। এরপর পশ্চিম সোনারপাড়া জামে মসজিদে এক বছর শ্রবণকারী হিসেবে ছিলেন। এরপর সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে আট বছর, উমরপুরের পাশের মসজিদে একবছর ইমামতি করনে। এরপর থেকে অদ্যবদি নয় বছর থেকে নগরীর সোনারপাড়া লেইক হাউসের মসজিদে তারাবির ইমামতি করে আসছেন।
ইমামতির অনুভূতি বলতে গিয়ে হাফেজ মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন শ্যামল সিলেটকে বলেন, মহান রবের শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি আমার মাতাপিতা, উস্তাদদের শুকরিয়া আদায় করছি যাদের মেহনত ও দুয়ার বদৌলতে আমি হাফিজে কুরআন হয়েছি। তারাবির নামাজে ইমামতির দ্বারা আমি মুসল্লিদের যে ভালোবাসায় পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। কুরআনের খাদেম হয়েই বেঁচে থাকতে চাই।