বঙ্গবন্ধুকন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন।
এরপর থেকে শেখ হাসিনা গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু নিহত হন।
বঙ্গবন্ধুর এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ দিন বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৪৩ বছর সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহানমুক্তিযুদ্ধসহ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে।
সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে পাঁচ বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তাঁর নেতৃত্বেই বর্তমানে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করে ইতিহাস গড়েছে দলটি। আর এই চার বারসহ পাঁচ বারের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তখন তাঁরা বেলজিয়ামে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে জার্মানি হয়ে তাঁরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় পান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তখন দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি।
জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে।
জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, নিপীড়নের শিকার হন দলের নেতাকর্মীরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে। দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এই পেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালেই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান।
ওই বছর ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক সংগ্রামী জীবন।
শেখ হাসিনাকে এই দীর্ঘ সময় দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক বন্ধুর পথও পারি দিতে হয়েছে। জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, কারাবরণ, জীবনের ঝুঁকি এবং বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।
সব ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ বার বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে এবং তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা ও দক্ষ নেতৃত্ব দিয়েই তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই সময়ের শাসন আমলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। তাঁর হাত দিয়েই বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে এবং উন্নত তথ্য-প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রেখে তাঁর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে ফিরে এলে ঢাকায় লাখ লাখ জনতা তাকে স্বাগত জানায়।
এ সময় শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত সমাবেশে লাখো জনতা তাঁকে সংবর্ধনা জানায়। শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।
পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই। ’ এর পর থেকেই দেশে শুরু হয় শেখ হাসিনার নতুন করে আরেক সংগ্রামের পথ চলা।
তার নেতৃত্বে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগকে আজকের অব্স্থানে দাঁড় করিয়েছেন তিনি।
দেশে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেও তার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেরও তিনি নেতৃত্ব দেন। এই সময়ের মধ্যে বহু বার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। পাঁচ বার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তিনি তিন বার বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন। এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জনও বয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা।
দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁর গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু নিজ দেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনা স্থান করে নিয়েছেন।