
সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রখর রোদ আর তীব্র গরম থেকে বাঁচতে একটু শীতল ছায়া, ঠান্ডা পানি, শরবত পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করছেন মানুষজন। পাশাপাশি অতিরিক্ত গরমে দেখা দিয়েছে নানা রোগ-বালাই।
ঘরে ঘরে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই জ্বর, বমি, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর ভিড়। বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হকারসহ শ্রমজীবীরা।
বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তি আর কষ্টের মধ্যে। কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। ফলে পরিবারের সদস্যরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসও যেন আগুনের মতো তাপ ছড়াচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই তাপপ্রবাহ থাকবে ৮জুন পর্যন্ত। এদিকে, তীব্র তাপমাত্রায় হাঁসফাঁস দশায় পড়েছে মানুষ। নগর ছাড়িয়ে গ্রাম, সর্বত্র গরমের তীব্রতায় ভুগছেন মানুষ। সোমবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের কড়া রোদ এড়াতে রাস্তাঘাটে মানুষজন ছাতা ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
আবার কেউ কেউ ছায়াযুক্ত স্থানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। রিকশা-ভ্যান-ঠেলাগাড়ি চালক ও দিনমজুরসহ কায়িক শ্রমে জড়িত বিভিন্ন পেশার মানুষের এখন জীবন ওষ্ঠাগত। অতিরিক্ত ঘাম ঝরিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে শরীর। বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্যানে করে বরফযুক্ত ফিল্টারে লেবুর শরবত ও আখের রস বিক্রি করতে দেখা গেছে। ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে অনেক জায়গায় লোডশেডিংয়ে জনজীবন ওষ্ঠাগত।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে গত কদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহের কারণেই এমন গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমের এই তীব্রতার কারণে এখন সবাই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা সহনীয় হয়ে উঠবে বলে সবাই আশা করে আছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সজিব আহমদ জানান, সোমবার সিলেটের সবোর্চ্চ তামপাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলিয়াস ও সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ২৭ ডিগ্রি সেলিয়াস। ৮ জুন পর্যন্ত এমন তাপপ্রবাহ থাকবে বলে তিনি জানান।
বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি জানান: ষড়ঋতুর নিয়মেই এখন চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস। এ সময়ে কাক্সিক্ষত সেই বৃষ্টির দেখা নেই। যতই দিন যাচ্ছে আবহাওয়া ততই বিরূপ ও চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। দিনভর প্রখর রোদ। খাঁ খাঁ করছে বিয়ানীবাজারের পথঘাট। একদিকে জ্যৈষ্ঠ মাসের কাঠফাটা গরম।
অন্যদিকে রাত আর দিনে সমানতালে চলছে লোডশেডিং। প্রচ- গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না উপজেলাবাসীর। রাতে গুমট গরমের দাপটও অনেক। সবমিলে অস্থির হয়ে উঠেছে এখানকার জনজীবন। এমনকি গরমের তীব্রতায় থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন বৃষ্টি বয়ে আনবে মৌসুমি বায়ু। তা আসতে একটু দেরি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু সৃষ্টি হওয়ার পরপরই বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ এবং মৃদুু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহের ধারাবহিকতা রয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর চলতি জুন মাসেও কম বৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে প্রচন্ড গরম পড়েছে। বিকেল ৩টা দিকে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় গড়ে লোডশেডিং হচ্ছে ১২-১৩ ঘন্টা। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় ও রাতে থাকছে না বিদ্যুৎ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোদের তেজস্ক্রীয়তায় ঘর থেকে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে। তীব্র গরমে অস্থির হয়ে পড়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন আরও বিপাকে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠে জীবনযাত্রা।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, মূলত টেকনাফ অঞ্চল দিয়ে দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। গত ৩০ বছরের গড় হিসাবে ৩১ মে টেকনাফ, ১ জুন কক্সবাজার, ২ জুন চট্টগ্রাম ও ৪ থেকে ৫ জুন দেশের মধ্যাঞ্চলে মৌসুমি প্রবেশ করে। এই সময়ের কিছু হেরফের হয় বটে। এবারও হয়েছে। তাই টেকনাফ অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটতে আরও দেরি হতে পারে। এরপর মৌসুমি বায়ুর দেশের অন্যত্র তা প্রবেশ করবে। এরপই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেট বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদুু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।