আজ শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জৈন্তাপুরে পাহাড় কেটে সাবাড়

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত নভেম্বর ১২, ২০২২, ০৬:০০ অপরাহ্ণ
জৈন্তাপুরে পাহাড় কেটে সাবাড়
শেয়ার করুন/Share it

সিলেটের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি উপজেলা হিসেবে পরিচিত জৈন্তাপুর উপজেলা। এ উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুই শতাদিক পাহাড় রয়েছে। সম্প্রতি শ্রেণির ভূমিদস্যুরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সেই পাহাড়গুলোকে সাবাড় করছে।

তবে সেসব পাহাড় গুলোতেও পড়েছে ভূমি খোকোদের থাবা। নিজস্ব ফায়দা লুটতে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি, আবাস্থল গড়ে তোলাসহ নানা স্বার্থে এসব পাহাড়গুলোকে নির্বিচারে বিলীন করে দিচ্ছে।

সকাল থেকে রাত সমান তালে চলে পাহাড় কাটার কাজ। তবে বেশিরভাগ সময়ে নিঝুম রাতে ও খুব ভোরে চলে বনাঞ্চলের আবৃতে ঘেরা পাহাড় কাটার ধুম। বিগত কয়েক বছরে এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধেকের চেয়ে বেশি পাহাড় ও টিলা কেটে সমতল করা হয়েছে।

এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও ভয় ভীতির কারণে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারছেন না। চক্রটি প্রশাসনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে রাতের আধাঁরে কিংবা ভোর থেকে পাহাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করে ফেলছে। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়েছে।

পাহাড় ধ্বংসকারিরা হলেন- জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর গ্রামের মৃত কুদরত উল্লার ছেলে মাসুক আহমদ, সহুদয় মানিক মিয়া, উমনপুর মৌজার ২২১ নং খতিয়ান এর জে,এল,নং ১৪১ এর মালিক মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে জোয়াদ আলী, ফতেপুর ইউনিয়নের উপরম্যামপুর এলাকার মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন, উমনপুর এরাকার নুর মিয়া হাজীর ছেলে মোহাম্মদ আলী ড্রাইভার ও সহুদয় সেলিম আহমদ মালিকানাদিন টিলা, বাগেরখাল লাল মরির দোকান সংলগ্ন এলাকার উলাই মেম্বারের বাড়ির পাশে মইফুড় (জুয়া খেড়ির) টিলা কাটে মাটি যাচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ এর বাড়ির পুকুর ভরাটের জন্য ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিঃ এর ১০ নং কোপের রাস্তা নির্মানে বড় ২ টি খাল সহ কৃষি জমি ভরাট করার জন্য সে সমুস্থ পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরেজমিন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন ও চিকনাগুল ইউনিয়নের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে মাটি কেটে করা হয়েছে সমতল। পাশেই অস্থিত্ব হারানো পাহাড়ের ক্ষত চিহ্ন। কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে সমতল করা জায়গায় স্থানীয় এক শ্রেণির বাসিন্দারা ঘর নির্মাণের কাজে ব্যস্ত।

আরও পড়ুন:  ফেঞ্চুগঞ্জে নৌকা নিয়ে মামা, ভাগ্নে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী

যেন পাহাড় কাটার যোদ্ধে নেমেছে তারা। সে সঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করে ফেলছে। প্রকৃতির বুকে মানুষের এমন থাবায় জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহাড়ের মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অধ্যাধুনিক এক্সেভেটর, ফেলুডার মেশিন। যার মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে পাহাড়ের মাটিগুলোকে কেটে ফেলা হচ্ছে। মাটি কেটে সেগুলোকে ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেকেই নদী, খাল বা জমি ভরাট করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করছে।

স্থানীয় সচেতন মহল জানান, নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে গত বর্ষা মৌসুমে উপজেলার চিকনাগুল ও চারিকাচা এলাকায় টিলা ধসে ৬জনের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটে তার পরেও তেমে নেই পাহাড় কাটা।

কি ভাবে এমন কাজ করে তা খুব দুঃখের বিষয়। পাহাড়ের তলে কিংবা পাহাড়ে যেসব বাড়িঘর রযেছে ভারী বর্ষণে যেকোনো মুহুর্তে ধসে যেতে পারে। আগামী বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকাও রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বিগত ৩-৪ বছর ধরে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে। আমাদের দুটি ইউনিয়নে প্রায় তিন ভাগের মধ্যে দুই ভাগই পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। আমাদের বাপ-দাদা আমল থেকে দেখে আসছি এ পাহাড়গুলো। শত শত বছরের এ পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে আমরা বড় হয়েছি। অথচ একটি ভূমিদস্যু মহল এ পাহাড়গুলো অবাধে কেটে ফেলছে।

 

যার ফলে সিলেট অঞ্চল জীববৈচিত্র্য পরিবর্তন হয়েছে। পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভিবিন্ন খাল বিল ভরাট করার ফলে অল্প বৃষ্টিতে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে পুরো উপজেলা। এতে আমাদের ফসলি জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা আর্থিকভাবে অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসিলেন্ড ঘটনাস্থলে এসে অভিযান পরিচালনা করে টিলার মাটি বোঝাই ৩টি ট্রাক পাওয়ার পরও কোন জরিমানা করা হয়নি।

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপা মনি দেবী বলেন, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ একটি বেআইনি কাজ। এটি কোনোভাবে গ্রহণ যোগ্য নয়। খবর পেয়েছি একটি চক্র গভীর রাতে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন:  সিকৃবিতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

এমতাবস্থায় আমি অভিযানে যাওয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে বালু বোঝাই ৩াট ট্রাক ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাই আমি আর জরিমানা করতে পারি নি। পরিবেশের কাজ তার পরও আমি সার্বক্ষণিক বিষয়টি মনিটরিং করছি। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

 

সিলেটের বার্তা ডেস্ক


শেয়ার করুন/Share it
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০