রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হতেই তাদের হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে নেন তারা। স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলেন প্রেসক্রিপশের (ব্যবস্থাপত্রের)।
অনুমতি ব্যতিত কারো ব্যবস্থাপত্র দেখা বেআইনী এমনটা বলেছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার।
এমন বেআইনী পন্থায় রোগীদের বিব্রত করে তাদের ব্যবস্থপত্রে কি লেখা না লেখা তা দেখার যেনো প্রতিযোগীতা চলছে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে।
এছাড়াও সুযোগ আর সময় বুঝে ফটো সেশনে লিপ্ত হয়ে যান ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তাদের এমন কর্মে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়ে বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলা রোগীরা সেবা নিতে এসে নাকাল হয়ে পড়ছেন।
এভাবেই নিজের পেরেশানীর কথা বলেন নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা আবদুল আলিম। তিনি শ্যামল সিলেটের এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার ভাগ্নিকে নিয়ে বুধবার দুপুরে গিয়েছিলাম বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখাতে। চেম্বার থেকে বের হতে না হতে আমাদের সামনে এসে ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ভীড় জমিয়েছেন।
ব্যাপারটা প্রথমে না বুঝে আতকে উঠলাম। পর প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইলেন। এভাবে প্রতিদিন অসংখ্য সেবাগ্রহিতারা অতিষ্ট হচ্ছেন। কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। গ্রামীণ জনপদের মানুষজন তো তাদের ফরমাল ড্রেসআপে ভুলবুঝে ব্যবস্থাত্র দিয়ে দেয়। প্রতিনিধিরা গোল হয়ে একেএকে দেখা শুরু করেন। এভাবেই গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্টও করছেন তারা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে কৌশলে ফটোশেসনে মেতে উঠেছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। রোগীদের বসার চেয়ারগুলোতে ব্যাগ রেখে দোকান খুলে বসেছেন তারা। ডাক্তারদের ভিজিট করার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। নিজেদের শক্ত অবস্থান কোম্পানির কাছে তুলে ধরতে তারা রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে নিচ্ছেন। বহির্বিভাগের সামনে এবং কোন রোগী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তোলা শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে আসা এক সেবাপ্রার্থী বলেন, যখনই হাসপাতালে আসি তখনই দেখি কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড়। ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা বেরিয়ে এলেই প্রেসক্রিপশন দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তারা। এতে করে রোগী ও তার স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, ব্যবস্থাপত্রে সেবাগ্রহিতার নাম-ঠিকানাসহ রোগের বর্ণনা লেখা থাকে। যা একজন ব্যক্তির গোপনীয় তথ্য। অনুমতি ব্যতিত কারো ব্যবস্থাপত্র দেখা বেআইনী। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করার অধিকার রাখেন। ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দ্বারা হাসপাতালসমূহে রোগীরা বিব্রতবোধ হোন, অনেকে না বুঝে তাদের হাতে নিজেদের ব্যবস্থাপত্র তুলে দেন।
সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার আরও বলেন, হাসপাতালে ঔষুধ কোম্পানীসমূহের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য আমাদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে সংসদেও বিষয়টি উঠবে। একটি আইন প্রণয়নের দ্বারাই এই সমস্যার সঠিক সমাধান হবে।