বীরাঙ্গনা হোসনেয়ারা। চুল হয়েছে যার সাদা। চোখেও ঝাঁপসেটে দেখেন। দাঁতও নড়তে শুরু করেছে। জীবনের অন্তিম সময়ে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করছেন তিনি। পরপারের ডাকে সারা দেওয়ার সময়ও যেনো ঘনিয়ে এসেছে।
প্রতিটি মুহুর্ত বিমর্ষ চেহারা। নিষ্ঠুর-নির্মমতার স্মৃতি তাকে তাড়া করে। পাক হানাদাররা তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। অপরাধ একটাই ছিল হোসনেয়ারার। তার স্বামী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতাকারী।
স্থানীয় রাজাকার আল-বদর মারফত খবর পেয়ে কয়েকজন হানাদার জােয়ান খুঁজতে আসে হোসনেয়ারার স্বামী আকবর আলীকে।
এক পর্যায়ে হোসনেয়ারা বেগমকে দেখে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তাদের।তারা তাকে ধরে নিয়ে যায় তাদের আস্তানায়। হোসনেয়ারার উপর চালানো পাশবিক র্নিযাতন। ভাগ্য পক্ষে থাকায় পাক হানাদারদের কাছ থেকে ছাড়া পান তিনি।
সবেমাত্র বিয়েশাদী হয়েছে। নবদম্পত্তি ছিলেন হোসনেয়ারা ও আকবর আলী।লোক নিন্দার ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নিরবে বিসর্জন দেন অশ্রু।
২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে রচিত হয় সাফল্যের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীতে জন্ম নেয় আরেকটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।
দীর্ঘ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ বান্ধব সরকার গঠন করলে আশায় বুক বাধেন হোসনেয়ারা বেগম। হয়তো মূল্যায়িত হবেন,হয়তা বা বীরঙ্গনা হিসেবে গেজেটভূক্ত হবেন।
অভাবের সংসার আর স্বামী মারা যাওয়া,সব মিলিয়ে জীবন যুদ্বে কোন মতে টিকে থাকতে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করেন হোসনেয়ারা বেগম। এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই না বলা কথা গুলো তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে আমাকে।
লোকমুখে শুনতে পাই জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার আমার মতো নির্যাতিত নারীদের বীরঙ্গনার খেতাব দিয়ে সম্মানিত করছেন। আপনার মাধ্যমে আমার যেন একটা ব্যবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করে দেন। আমি আজীবন তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।