৮-১২ বছরের মধ্যে সবার বয়স। ৪র্থ আর ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওরা।রাগীব আলীর বাগানের পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাদের বসবাস। নিম্নবিত্ত পরিবারে সন্তান তারা। চায় পড়ালেখা করতে। অনেক দুর এগিয়ে যেতে। কিন্তু রবিবার থেকে স্কুল খুললেও তাদের আর যাওয়া হচ্ছে না পাঠশালায়।
করোনা মহামারীর প্রাদূর্ভাবের পর থেকে টানা দেড়বছর ধরে স্কুল বন্ধ। সেই থেকে তারা খেলাধুলা কিংবা দুষ্টমি না করে পরিবারের হাল ধরতে শুরু করে।
আবুল হোসেন উজ্জ্বল প্রখর রোদে লতা তুলে এসেছে বিক্রির জন্য। মুখে হাসি। পড়ো কিনা জিজ্ঞেস করতেই বলে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। স্কুল খুলেছে তবে যাইনি। যাবো বলে আরেকটা হাসি দিল শিশুটি।
সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের অর্ন্তগত রাগীব আলীর বাগানের পাশে মাখর খলা নামক গ্রামে থাকে সে।
কখনো বাড়ির আঙিনায়, ক্ষেতের আল পথে, কখনো বা খাল-বিলের ঝোপঝাড়ে, নয়তো পরিত্যক্ত পুকুরের পাড়ে গজিয়ে ওঠা কচুগাছে যে লতা জন্মে তা কুড়িয়ে আঁটি বেঁধে নিয়ে আসে বিক্রির জন্য।
এই লতা বিক্রি করে সংসারের জন্য চাল ডাল কিনতে মাবাবার হাতে প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা তুলে দেয় সে। দুমুঠো ভাতের যোগান দিতে এভাবেই ওরা সংসারের হাল ধরেছে।
সিলেট নগরী থেকে এয়ারপোর্ট রোড হয়ে কাকুয়ারপাড় এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালঘেষে ছোট ছোট টিলার সামনেই তারা লতার আঁটি নিয়ে প্রতিদিন বিক্রির জন্য আসে।
পথচারী, পর্যটকরা তাদের দেখে থামেন। লতা কিনে নিয়ে যান। অনেকে আবার ন্যায্য দামের চেয়েও বেশী দেন তাদের সাহায্যের জন্য।
উজ্জ্বলের পাশেই লতা নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছে সাইদুর রহমান নামের আরেক শিশু। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে। একই এলাকায় থাকে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, লতা বিক্রির টাকা সে তাঁর পরিবারের কাছেই দিয়ে দেয়। সেখান থেকে ১০/২০ টাকা সে পায় মজা খাওয়ার জন্য।
৫ম শ্রেণিতে পড়ে আলী আকবর ও তার ভাই আলী আসগর। তাদের বসবাসও মাখর খলা গ্রামে। দুইভাই মিলে লতা কুড়িয়ে একসাথে বিক্রি করে বিকেল শেষে সন্ধ্যার পূর্বেই তারা বাড়ি ফিরে যায়।