মাদকজোনগুলোতে ছিলো মাদকসেবী আর মাদক কারবারিদের আনাগোনা। চোরাচালান,ছিনতাই,চুরি ডাকাতির পাশাপাশি প্রায় সবকটি হাটবাজারসহ পর্যটন স্পট সমুহে ভারতীয় তীরখেলা নামক জুয়া ছিলো অপরাধ জগতে একটা ট্র্যান্ড। পর্যটন স্পট সমুহে ছিলো ৩ কার্ড নামক জমজমাট জুয়ার আসর। লোভনীয় এ খেলার ফাদে ফেলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হতো সর্বস্ব।
সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন চোখে পড়েনা। মাদকজোনগুলোও এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য,মাদক পাচারকারীদের আনাগোনা দৌরাত্মও যেন হারিয়ে গেছে। মাদক,চোরাচালনরোধ,অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি অস্ত্র,ব্যবসায়ীসহ দাগী অগণিত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত দাগী বেশকজন অপরাধীর ঠিকানা এখন সিলেট শহরতলীর সুরমা তীরের বাধাঘাট জেলখানায়। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন জুড়ে গড়ে উঠা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে টিম ওর্য়াক। এলাকার ছোটখাটো ঘটনা সমুহ থানায় কিংবা আদালতে গড়ানোর আগেই বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে বাদী বিদাীর সম্মতিতে। বিগত দুই বছরে এমন কয়েক শতাধিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা পুলিশের এই বিট পুলিশিং সেবার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার বিষয়টি একাধিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ভূমিকাও সচেতন মহলে প্রশংসা কুড়ায়।
এ চিত্র সিলেটের গোয়াইনঘাটের। সিলেটের গোয়াইনঘাটে কমেছে সার্বিক অপরাধ প্রবনতা। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের প্রচেষ্টার কারণেই এসব সামাজিক অপরাধ প্রবনতা হ্রাসে ভূমিকা পালন করেছে। টিম গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের চৌকস পেশাদারিত্ম আর মাদকসহ অপরাধ প্রবনতা প্রশমনে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরন সফলতার কারণ বলে উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ষ্ট্যাটম্যান্ট অফিসার সূত্রে জানা যায় ২ আগষ্ট ২০১৯ খ্রিঃ গোয়াইনঘাটে থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে মোঃ আব্দুল আহাদের যোগদানের পর হইতে অধ্যাবধি থানা এলাকায় মাদক,ছিনতাই,ডাকাতিরোধে টিম গোয়াইনঘাট থানাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। বিট এলাকার অফিসারদের এক ইউনিয়নে পরস্পর বদলি করে গড়ে তুলেন প্রতিটি ইউনিয়নে নতুন ছকের আইনশৃংখলা পরিসেবা। বিশ্বস্থ সোর্স নিয়োজিত করে টিমওয়ার্কও বাড়ানো হয়। অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ শুরুতেই থানা এলাকায় মাদকের বিরোদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি ঘোষনা করে অপরাধ দমনে অভিযান শুরু করেন।
০২ আগষ্ট ২০১৯ হতে ৩০ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ৯৩৯ টি জিআর/সিআর এবং ৯৪ টি সাজা পরেয়ানাসহ সর্বমোট ১,০৩৩ টি পরোয়ানা তামিল/নিষ্পত্তি করে পুলিশ। মোঃ আব্দুল আহাদ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত অবস্থায় এখন পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানায় সর্বমোট ৫২৯ টি মামলা রুজু হয়। তার মধ্যে ৩৩১ টি মামলা তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে অপরাধীদের বিরোদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় ও ২৩ টি মামলায় ঘটনার সাথে সত্যতা না পাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে জানা যায় গোয়াইনঘাট থানার সার্বিক অপরাধ প্রবনতার চিত্র বিগত দিনের চেয়ে গত দু বছরের ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়ে উন্নতি সাধিত হয়েছে। দাগী অপরাধী গ্রেফতার ও উদ্ধারকৃত মাদকসহ অপরাধ প্রবনতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনাতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়ায় সিলেট এমনকি সারা দেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে টিম গোয়াইনঘাট থানা। তার মধ্যে ইতিপুর্বে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশী রিভলবারসহ অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের মুলহোতা আরব আলীকে গ্রেফতারে সক্ষম হয় থানা পুলিশ। পাশাপাশি ১কেজি হিরোইনসহ ৩জন মাদক পাচারকারী গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও থানা এলাকায় চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস ভিকটিম টমটম চালক শাহিন আলম হত্যা মামলার মুল আসামীদের মধ্যে অন্যতম ২জনকে,জাফলংয়ে চাঞ্চল্যকর ফটোগ্রাফার উজ্জল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মুল ২ঘাতক ও তাদের পালিয়ে যেতে সহায়তাকরী অপর ২জনকে,জাফলংয়ে চাঞ্চল্যকর অপর ক্লু-লেস ডিজিস রাসেল হত্যা মামলায় জড়িত ৬ আসামীকে গ্রেফতারসহ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে প্রশংসিত থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ নিজেই ।
গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের সূত্রমতে ০২ আগষ্ট ২০১৯ হতে ৩০ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত তার নেতৃত্বে গোয়াইনঘাট থানায় মোট ১৭০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে ০১ (এক) কেজি হিরোইন,৬৬৬ বোতল ভারতীয় মদ, ৮৮ লিটার দেশীয় চোলাইমদ, ১১ কেজি ৫৫০ গ্রাম গাঁজা, ৩৯৫ বোতল ফেন্সিডিল, ১,৮৮৩ পিচ ইয়াবা, বিয়ার ক্যান ০৯ (নয়) বোতল রয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১,১৪,৯৬,২৫০/- টাকা উদ্ধার করে মাদক আইনেই মোট ১৫৩ (একশত তিপান্নটি) টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মাদক,চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই বন্ধকরণসহ চিহিৃত মাদক চোরাচালানী গ্রেফতার বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারসহ অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য থানার অফিসার ইনচার্জ সহ একাধিক এস,আই,এ,এস,আইগণ সিলেট জেলার শ্রেষ্ট অফিসারের পুরুস্কারে ভুষিত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ জানান,আমি গত ০২ আগষ্ট ২০১৯ গোয়াইনঘাট থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের পর সিলেট পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএমর সার্বিক দিক নির্দেশনা ও তথ্যানুযায়ী গোয়াইনঘাট থানা এলাকায় অপরাধ দমনের উদ্যোগ নেই। প্রথমেই মাদকের বিরোদ্ধে পদক্ষেপ নেই,এরপর একে একে চুরি,ডাকাতি,ইভটিজিং,জুয়া বন্ধে তৎপর হই।
গোয়াইনঘাট থানা এলাকার ১০টি ইউনিয়নেই বিট পুলিশিংয়ে শ্রেনী বিন্যাস করে অফিসার ও বিশ্বস্থ্য সোর্স সৃষ্টি করে অরপাধ দমনে কাজ শুরু করে টিম গোয়াইনঘাট থানা। আমাদের ধারাবাহিক অভিযানে ইতিপুর্বে অস্ত্র চোরাকারবারী,অগণিত মাদক ব্যবসায়ী,দাগী অপরাধী গ্রেফতারে সক্ষম হয় থানা পুলিশ। উদ্ধার হয় অগণিত মাদকদ্রব্য। তাছাড়া থানা এলাকায় নারী নির্যাতন,ধর্ষন,ইভটিজিংরোধ ও সাইবার ক্রাইমে তরুন ও যুব সমাজ যাতে না জড়ায সে লক্ষে ইউনিয়নে ইউনিয়নে প্রতি মাসে পুলিশিং সমাবেশ আয়োজন করে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা সমুহ স্থানীয় সচেতন মহলকে নিয়ে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি এবং এতে সফলতাও এসেছে ব্যাপকহারে।
আমাদের এ পথচলায় সঠিক তথ্য ও সহযোগিতা দিয়ে টিম গোয়াইনঘাট থানা পুলিশকে এলাকার সচেতন মহল,জনপ্রতিনিধি,সাংবাদিক,সুশীলসমাজ সর্বাত্মক সহযোগিতা করার ফলে আমরা গোয়াইনঘাটের অপরাধ দমনে আরও উৎসাহিত হয়েছি। অফিসার ইনচার্জ হিসেবে এখানে যতোদিন আছি অপারধ ও অপরাধীর সাথে কোন আপস নেই। অপরাধ দমনে সিলেট পুলিশ সুপার নির্দেশিত পথ থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হবেনা টিম গোয়াইনঘাট থানা।