আজ মঙ্গলবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জকিগঞ্জে স্ত্রী ও মেয়েকে দিয়ে মাদকের ব্যবসা করান ইউপি সদস্য ছুবহান

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১, ০৮:০১ অপরাহ্ণ
জকিগঞ্জে স্ত্রী ও মেয়েকে দিয়ে মাদকের ব্যবসা করান ইউপি সদস্য ছুবহান

সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা জকিগঞ্জে নিজ স্ত্রী ও মেয়েকে দিয়ে মাদকের ব্যবসা করান স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুছ ছালাম ছুবহান।

তার বিরুদ্ধে রয়েছে চোরাচালানসহ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ। তিনি ইউপি সদস্য হয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘ছুবহান বাহিনী’।

এমন অভিযোগ এনে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এলাকাবাসী।

তাদের কর্মকান্ডে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। মেম্বার সোবহান ও তার স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলি ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নিকে দিয়ে এলাকায় চলছে রমরমা মাদকের ব্যবসা। এসব অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের সবাই অনাস্থা প্রস্তাবও দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে। তারপরও থেমে নেই তার মাদক ও চোরাকারবারি ব্যবসা। এলাকায় ফেন্সিডিল, মদ-জুয়ার আসর, নারীদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ, ইয়াবাসহ নানা অপরাধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সোবহান মেম্বার ও তার বাহিনীর কারণে কোনাগ্রাম ও নয়াগ্রামসহ আশপাশ এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে বলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ করেছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভুক্তভোগীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গ্রামবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহিম জানান, জকিগঞ্জ উপজেলার মধ্যে তাদের দুই গ্রামের সুনাম ও ঐতিহ্য রয়েছে। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচিত করেছিলেন ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার কোনাগ্রামের মৃত বশারত আলী ওরফে বশাই মিয়ার ছেলে আব্দুস সালাম ওরফে সোবহান-কে। সে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষকে জুলম-নির্যাতন শুরু করছে। বহিরাগত লোক দিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য গুন্ডা বাহিনী তৈরি করেছে। ঐ বাহিনীর মাধ্যমে এলাকার সাধারণ মানুষের উপর হামলা, শারীরিক নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। তার নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করতে পারেন না।

কেউ প্রতিবাদ করলে সোবহান, লিলি, মুন্নীসহ তাদের বাহিনী মিলে ওই লোকের উপর চালায় নির্যাতন। আর সাধারণ লোকজনকে হয়রানির জন্য বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি দফতরে মিথ্যে, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, কাল্পনিক কল্প-কাহিনী সাজিয়ে দরখাস্ত দাখিল করে এলাকার লোকদের হয়রানি করছে। এছাড়া সোবহান ও তার স্ত্রী, মেয়ে এলাকার লোকদেরকে দেখলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকির দিয়ে বলে সবাইকে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মিথ্যে কাহিনী সাজিয়ে মামলা দিয়ে সবাইকে জেলের ভাত খাওয়াবে। এলাকাবাসী তাদের এসকল হুমকি ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ভীত সন্ত্রস্ত। ফলে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল বয়সের নারী পুরুষ থাকেন আতঙ্কে।

আরও পড়ুন:  করোনা: জুমার জামাত বাসায় হবে তো?

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, আব্দুস সালাম ওরফে সোবহান, তার স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলিকে সিলেট জেলার কানাইঘাট থানা পুলিশ ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট কানাইঘাট বাজারস্থ তাহমিনা স্টোর থেকে ১৯ হাজার টাকা চুরি ও টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে (মামলা নং ২৪(৮)১৮ইং) দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন। এর পূর্বে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই গোলাপগঞ্জ থানার ওয়াব প্লাজার কিডস ক্লাব নাম দোকানে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা চুরির অপরাধে মেম্বারের স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলির নামে গোলাপগঞ্জ থানার (মামলা নং ০৫(৬)১৮ ইং) রুজু হয়। এরপর ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি বিয়ানীবাজার জামান প্লাজায় আনজু জুয়ের্লাসে স্বর্ণ চুরি করাকালিন সময়ে জনগণের হাতে গ্রেপ্তার হয় লিলি। প্রত্যেক মামলায় লিলি কয়েক মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে এলাকায় পুনরায় তার মেয়ে ও স্বামী মিলে তাদের বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, বাজার ও দোকানে গিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে চুরি এবং অস্ত্র দিয়ে মহড়া দেয়।

এনিয়ে এলাকাবাসী সিলেটের ডিআইজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জকিগঞ্জ থানার ওসির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া ওয়ার্ডের মেম্বার সোবহানের নানা ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, মাদক ব্যবসা, নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা, জনগণের ত্রাণের টাকা, চাল, ওয়ার্ডের উন্নয়নের বরাদ্দ আত্মসাৎ ও চুরির অভিযোগে ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের এক সভায় সকলের সর্বসম্মতিক্রমে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী সাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করেন।

এছাড়া “কোনা গ্রাম প্রবাসী সমাজসেবা পরিষদ” ও এলাকার শতাধিক লোক সাক্ষর নিয়ে থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। থানায় লিখিত দেয়ার কারণে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কোনাগ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে আলকাছুর রহমান, মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মালিক, মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে হেলাল আহমদ, মৃত শফিকুল হকের ছেলে বিলাল হোসেন, আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল্লা আল রাজু, মৃত হাবিবুর রহমান চৌধুরীর ছেলে মাওলানা আফতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্যান্যদেরকে কোনগ্রাম বাবুর খালে ব্রিজের সামনে পেয়ে সোবহান, লিলি, মুন্নীসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী মিলে অস্ত্রশস্ত্র সহকারে হত্যার জন্য আক্রমণ করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে রক্ষা করেন। এরপরও বেপরোয়া গতিতে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমসহ সাধারণ জনগণকে নির্যাতন-নিপীড়ন ও নানাবিধ অপরাধ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সোবহান। তাই এলাকার সুনাম রক্ষা ও মান-সম্মান বিনষ্ট না করতে ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সোবহান তার স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলি ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নিসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্ব মহলের কাছে জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।

আরও পড়ুন:  সিলেটে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের দোয়া

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আলকাছুর রহমান, এখলাছুর রহমান, মাওলানা হাফিজ মখলিছুর রহমান, রফিক মিয়া, আব্দুল মালিক মলই, আব্দুন নুর নরাই, আব্দুল হক, মফিক মিয়া, জয়নুল হক, আব্দুল আল রাজু, বেলাল আহমদ, জাহেদ আহমদ, আব্দুল মুমিন, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, হেলাল আহমদ, দিলওয়ার আহমদ, রাজু আহমদ, আরিফ হোসেন, জাহেদ আহমদ, জহিরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রহিম, সাহেদ আহমদ, আরিফ হোসেন, রিফাত আহমদসহ প্রমুখ।

সিলেটের বার্তা ডেস্ক