সুতাং নদী। বাংলাদেশ-ভারতের আন্ত: সীমান্তে অবস্থিত এই নদীটি। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। ৮২ কিলোমিটারের দৈর্ঘ্য আর ৩৬ কিলোমিটারের গড় প্রস্ত নিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮২নং নদীর তালিকায় এটি।
এক সময়ের খরস্রোতা নদী আজ মুমূর্ষ অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। একদিকে নদীখেকোরা অপরদিকে শিল্পায়নের বর্জ্য তার স্বচ্ছ জলরাশিকে ছাইয়ে পরিণথ করে তুলেছে।
হবিগঞ্জের সুতাং নদী দখল-দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি ও নদীটির প্রাথমিক প্রবাহ এবং সীমানা নির্ধারণের জন্য সরকারের ২০টি দপ্তরে আইনি নোটিশ পাটিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)। নোটিশপ্রাপ্তদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের চারজন সচিবও রয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশ পাঠানোর তথ্য জানান বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা।
নোটিশে বলা হয়েছে, সুতাং নদী ভারত থেকে উৎপন্ন হয়ে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী হবিগঞ্জ সদর, লাখাই এবং চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুশিয়ারা নদীতে পতিত হয়েছে।
এ নদী এলাকাবাসীর যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে নৌ-চলাচল না করলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও ট্রলার চলাচল করে থাকে। বোরো মৌসুমে এ নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। সনাতন ধর্মের লোকজন এক সময় এ নদীতে পুণ্যস্নান করতেন। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হতো বেলেশ্বরী বান্নী। দেশের অন্য নদীর মতো এ নদীর অবস্থাও সংকটাপন্ন। দখল, দূষণ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ নদীবিরুদ্ধ বহুমুখী ব্যবহারে এ নদীর অস্তিত্ব আজ সংকটাপন্ন।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ওলিপুরে স্থানে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সুতাং নদী। অব্যাহত শিল্পবর্জ্যের দূষণে নদীটির পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে, পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, কষ্টকর হয়ে পড়েছে নদীর পাড় দিয়ে চলাচল এবং দূষণের কারণে মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে নদীটি। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী নদী দখল ও দূষণমুক্ত রেখে যথাযথ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ব্যর্থ।
নোটিশপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বন ও জলবায় পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানি মন্ত্রণালয়ের সচিব। এছাড়া সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারসহ (এসপি) আরও ১৬টি দপ্তরে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে সুতাং নদী দখল ও দূষণকারী সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ তালিকা এবং নদীটির প্রাথমিক প্রবাহ ও সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) জরিপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে সেখানে বালু উত্তোলনসহ নদী বিরুদ্ধ সব কার্যক্রম বন্ধ ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানিয়েছে বেলা। নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে এসব বিষয়ে বেলাকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবহিত না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।