
সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভা নির্বাচন্ন অত্যাসন্ন। মেয়র পদে এবার লড়াই করছেন ছয় প্রার্থী।
প্রার্থীর মধ্যে একজন কোটিপতি আরেকজন লাখপতি, মামলা বেশী এক মেয়র প্রার্থীর আর স্বশিক্ষিতই রয়েছেন।
পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগ মনোনীত লুৎফুর রহমান (নৌকা), বিএনপির মো. শরিফুল ইসলাম (ধানের শীষ), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নজির আহমদ (হাতপাখা), তিন স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো. নিজাম উদ্দিন (খেজুরগাছ), কাওছার আহমেদ (মোবাইল ফোন) ও মো. সুহেল আমীন (জগ) প্রতীক।
এই ছয় প্রার্থীর মধ্যে নগদ অর্থ ও সম্পদে শীর্ষে বর্তমান মেয়র মো. নিজাম উদ্দিন। কোটিপতি এ প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে যাওয়া অন্য সবাই লাখপতি। এদের মধ্যে বিচারাধীন তিনটি মামলা ঘাড়ে নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন বিএনপির প্রার্থী মো. শরিফুল ইসলাম। ছয়প্রার্থীর মধ্যে চারজন উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোলেও অন্য দু’জন স্বশিক্ষিত।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া মেয়র প্রার্থীদের হলফনামার বিবরণী কষে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
লুৎফুর রহমান
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন লুৎফুর রহমান। হলফনামার তথ্যানুযায়ী, শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখাননি তিনি। নগদ ১ লাখ টাকা থাকলেও ব্যাংক দেনা রয়েছে ১২ লাখ টাকা। হলফনামায় নিজ নামে একটি মোটরসাইকেল রয়েছে উল্লেখ করলেও এর মূল্য দেখাননি। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র আছে ৬ লাখ ২২ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে কোনো জমি-জমা না থাকলেও যৌথ মালিকানাধীন এক বিঘা জমিতে বাড়ি ও কৃষি জমি আছে ২ বিঘা।
স্ত্রীর নামে জমি-জমা ও স্বর্ণালঙ্কার পর্যন্ত নেই।
মো. শরিফুল ইসলাম
বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মো. শরিফুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী এ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। নিজের হলফনামায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পাঁচটি মামলার বিবরণ দিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দায়েরকৃতসহ তিনটি মামলা বিচারাধীন। দু’টি মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা। নগদ এক লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা ৫০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, আসবাবপত্র ও কৃষিযন্ত্রপাতি আছে সাড়ে ৬ লাখ টাকার। নিজের একটি মোটরসাইকেল থাকলেও এর মূল্য উল্লেখ করেননি। স্ত্রীর নামে জমি-জমা, ব্যাংক একাউন্ট না থাকলেও স্বর্ণালঙ্কার আছে দুই লাখ টাকার।
মো. নিজাম উদ্দিন
এবার নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন কানাইঘাট পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. নিজাম উদ্দিন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। খেজুরগাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্ব এ স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থীর বার্ষিক আয় ১০ লাখ ১০হাজার ৩২৪টাকা। এরমধ্যে মেয়রের সম্মানী ৩ লাখ ৬০ হাজার। আর ভাড়াবাবদ ৭লাখ ৫০হাজার ৩২৪টাকা। নগদ ১৪ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে ৪৯ লাখ ৭৯ হাজার ১৮২ টাকা, শেয়ার আছে ২৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি, স্বর্ণালংকার ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র আছে দেড় লাখ টাকার। নিজ নামে কানাইঘাট ও সিলেটে ৪তলা বিশিষ্ট দু’টি করে এবং ঢাকায় ৫তলা ভবন আছে। নিজ নামে ২২ একর ও স্ত্রীর নামে ৬ একর কৃষি জমিও রয়েছে। তবে স্ত্রীর সোনা-দানা নেই।
কাওছার আহমেদ
মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী কাওছার আহমেদ। শিক্ষাগত যোগ্যতা দাখিল। তার বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকা। নগদ ১ লাখ ও ব্যাংকে আছে ২ লাখ টাকা। ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র আছে সাড়ে ৩ লাখ টাকার। নিজ নামে কৃষি জমি ২ বিঘা ও যৌথ নামে একটি বাড়ি আছে। ব্যাংক দেনা এবং কোনো মামলা নেই। এই মেয়র প্রার্থীর স্ত্রীর নামে নেই জমি-জমা, এমনকি সোনা-দানাও।
মো. সুহেল আমীন
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. সুহেল আমীনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্ব-শিক্ষিত। জগ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্ব এ মেয়রপ্রার্থীর বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা। আয়ের উৎস ব্যবসা, কৃষি ও দোকান ভাড়া। নগদ ১ লাখ ২০ হাজার ও ব্যাংকে জমা আছে ১০ হাজার টাকা। ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি আছে। ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র আছে আড়াইলাখ টাকার। যৌথ মালিকানায় নিজের নামে ২৫ শতক কৃষি জমি, নিজের চারটি দোকান ও একটি বাড়ি আছে। স্ত্রীর নামে ৬৬ শতক কৃষি জমি এবং ব্যাংকে ৩০হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার আছে ২লাখ টাকার। পেশায় স্টাম্প ভেন্ডার ব্যবসায়ী সুহেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা থাকলেও বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি।
নজির আহমদ
হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন ইনলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী নজির আহমদ। স্বশিক্ষিত এ মেয়রপ্রার্থীর বার্ষিক আয় প্রবাস থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নগদ ৫০হাজার ও ব্যাংকে আছে দেড় লাখ টাকা। নিজের বা স্ত্রীর কোনো স্বর্ণালঙ্কার নেই। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র আছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ৪০ শতক, যৌথ মালিকানায় ১৫ বিঘা ও স্ত্রীর নামে ৩ শতক কৃষি জমি রয়েছে। যৌথ মালিকানায় বাড়ির জমি আছে ২ বিঘা। ব্যাংক দেনা ও মামলা নেই এই মেয়রপ্রার্থীর।
কানাইঘাট পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
উল্লেখ্য, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যে হলফনামা প্রার্থীরা দাখিল করেছেন, তাতে ভুল তথ্য দেওয়া হলে প্রার্থিতা বাতিলের বিধানও রয়েছে।
২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর কানাইঘাট পৌরসভা গঠিত হয়। ৩১টি গ্রাম নিয়ে ৯ ওয়ার্ডবিশিষ্ট পৌরসভার আয়তন চার হাজার ৬৭৬.৯৫ একর। ২৫ হাজার ৪৯৯ জনসংখ্যার পৌরসভায় ভোটার ১২ হাজার ৭৯৩।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক নিজাম উদ্দিন আল মিজান। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ হাজার ৮৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তৎকালীন মেয়র লুৎফুর রহমান পান ২ হাজার ৮৯১ ভোট।