
দলের বিদ্রোহি প্রার্থীদের কারণে বিএনপির সাথে ভোটযুদ্ধে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি থেকে বিদ্রোহি প্রার্থী থাকার পরও ফুরফুরে মেজাযে আছেন ধানের শীষের প্রার্থী।
দলের মনোনীত প্রার্থীকে না মেনে ক্ষমতাসীন দলের এই দুই জন নারকেল গাছ ও জগ প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে আছেন।
সরকারি দলে তিন ভাগে বিভক্তির ফায়দা নিতে চান বিএনপি নেতা আবুল হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি বাজিমাতের আশা করছেন।
১৯৯৯ সালে গঠনের পর থেকে এখানে তিনবার নির্বাচন হয়েছে, যার একটি উপনির্বাচন। এর মধ্যে দুইবার জিতেছে বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী।
প্রথম নির্বাচনে জেতেন নির্দলীয় প্রার্থী মুহিবুর রহমান চাষী (চেরাগ মিয়া)। এক বছর পর তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে জয়ী হন বিএনপি নেতা আফরোজ চৌধুরী।
দ্বিতীয় নির্বাচনেও জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী আবু ইব্রাহিম জমশেদ। তৃতীয় নির্বাচনে জেতেন আওয়ামী লীগের জুয়েল মিয়া, যাকে এবারও প্রার্থী করেছে দল।
কমলগঞ্জে আওয়ামী লীগ ত্রিখণ্ড, ফুরফুরে বিএনপি
এখানে দলের সমর্থন আশা করছিলেন জেলা যুবলীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, যিনি তিনবারের কাউন্সিলর। মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন উপজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হেলাল মিয়াও।
দল বিবেচনা না করলেও ভোটের লড়াই থেকে দূরে থাকতে রাজি হননি তারা। আনোয়ারের মার্কা নারকেল গাছ আর হেলালের মার্কা জগ।
দুই বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার পরেও দলের শক্তিক্ষয় হওয়ায় বেকায়দায় নৌকা প্রতীকের জুয়েল মিয়া। অন্যদিকে ফুরফুরে মেজাজে বিএনপির আবুল হোসেন। তবে তাকে ঘিরেও বিএনপিতে দ্বন্দ্ব আছে।
নৌকা মার্কার প্রার্থী জুয়েল আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এবারও নৌকার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
গত নির্বাচনের আগে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির ৮০ শতাংশ পূরণ হয়েছে দাবি করে জুয়েল বলেন, ১৯ বছরের জমে থাকা জঞ্জাল পাঁচ বছরে সমাধান করা সম্ভব নয়। এ কারণেই তিনি আরও একবার সুযোগ দিতে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন।
ধানের শীষের আবুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কমলগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। দলীয় ভেদাভেদ ভুলে সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ কাজ করলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে।’
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করছি। তিন বারের কাউন্সিলর ছিলাম। গত নির্বাচনেও আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এ বছর আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশ্বাস দেয়ায় তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিনি। এ বছর দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা চেয়েছেন বলেই নির্বাচন করছি। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী হেলাল মিয়া বলেন, ‘পৌর এলাকার সর্বস্তরের জনগণের চাপে প্রার্থী হয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌর নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার জানান, নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছেন।
পৌরসভায় মোট ভোটার ১৩ হাজার ৯০৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৯১১ জন, নারী ছয় হাজার ৯৯৪।
সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১১ জন লড়াই করছেন।