
কোভিড-১৯’র মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন-ফেব্রুয়ারিতে খুলতে পারে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তাই শ্রেণিকক্ষে সতর্কতামূলক প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের জন্য যা জানা আবশ্যক।
স্কুলগুলো পুনরায় খোলার সাথে সাথে কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে শ্রেণিকক্ষের ভিতরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। নিম্নোক্ত বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে শিক্ষকদের সহায়তা করাই এই নিবন্ধটির উদ্দেশ্য:
স্কুলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা
হাইজিন এবং হাত ধোয়া সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন
শ্রেণিকক্ষের পরিষ্কার-পরিছন্নতা রক্ষা এবং জীবাণু ধ্বংস করার পরামর্শ
কোনও শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া
মহামারী চলাকালীন সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে শিক্ষকরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটিই শিক্ষার মূল বিষয়। স্কুলগুলো পুনরায় খোলার সাথে সাথে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুরা যাতে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং ভুলে যাওয়া জ্ঞান এবং দক্ষতাজনিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে – এমনটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
একজন শিক্ষক হিসাবে, তথ্য জানার ফলে কেবল নিজেদের নয়, শিক্ষার্থীদেরও সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। সমাজে ভয়ভীতি ছড়িয়ে দেয় এবং গুজব ছড়িয়ে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত এমন ভূয়া তথ্য এবং বিপজ্জনক কল্পকাহিনী সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
আপনার কিছু শিক্ষার্থী এমন পরিবার থেকে স্কুলে ফিরে আসতে পারে যেখানে তারা কোভিড-১৯ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য শুনেছে। তাদেরকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে।
কোভিড-১৯ ভাইরাসটিকে বোঝা, এটি কীভাবে ছড়ায় এবং ভাইরাসটি থেকে কীভাবে আমরা নিজেকে এবং অন্যকে রক্ষা করতে পারি – সে সম্পর্কে শ্রেণিকক্ষের পদ্ধতি এবং প্রোটোকল তৈরির ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। বিধিগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য ভাইরাসটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানা দরকার। শিশুদের উদ্বেগের কোন বিষয় ও এ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা থাকলে সেগুলো শুনুন এবং বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন। তাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করুন এবং একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এগুলো যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সে সম্পর্কে তাদেরকে আশ্বাস দিন।
কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্যের ক্ষেত্রে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আপনার দেশের স্থাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতো নির্ভরযোগ্য সূত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত থেকে ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুসরণ করে আমরা নিজেরদেরকে এবং আমাদের চারপাশের মানুষজনকে রক্ষা করতে পারি।
স্কুলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা উঠলেই, আপনার স্কুল প্রশাসন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পদ্ধতি এবং আপনার দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং/অথবা স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৈরিকৃত প্রোটোকল অনুসারে শ্রেণিকক্ষের জন্য কিছু বিধি প্রস্তুত করা জরুরী।
সুপারিশকৃত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে:
স্কুলে উপস্থিত প্রত্যেকের মধ্যে কমপক্ষে এক মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা
প্রতিটি ডেস্কের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো (প্রতিটি ডেস্কের মধ্যে কমপক্ষে ১ মিটার বা ৩ ফুট), হঠাৎ করে ছুটি/বিরতি ও দুপুরের খাবারের বিরতি দেওয়া (এটি করা সম্ভব না হলে, একটি বিকল্প হলো ডেস্কে বসে দুপুরের খাবার খাওয়া)
স্কুল এবং স্কুল-পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেলামেশা সীমিত করা। যেমন, একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সারাদিন একটিমাত্র ক্লাসরুমে থাকবে, এবং শিক্ষকরা বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে যাতায়াত করবেন; অথবা, সম্ভব হলে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশপথ ব্যবহার করা, অথবা প্রতিটি শ্রেণির জন্য বিল্ডিং/শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ এবং বের হয়ে যাওয়ার একটি পদ্ধতি চালু করা
স্কুল শুরু এবং বন্ধের সময়ের মধ্যে ভিন্নতা আনতে এবং স্কুলের সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের একসাথে থাকা এড়াতে স্কুলের দিনগুলোকে আলাদা করা
প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে যাতে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রবেশের অনুমতি পায় (যদি জায়গা থাকে) সেজন্য সম্ভব হলে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা।
স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া বা ডে কেয়ারের সময় জনসমাগম না করার পরামর্শ দেওয়া, এবং সম্ভব হলে, স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার বা সম্প্রদায়ের বয়স্ক সদস্যদের পরিহার করা। একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিশুদের বড় ধরনের জমায়েত কমাতে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া/শিক্ষার্থীদের স্কুলে রেখে যাওয়ার সময়গুলোকে আলাদাভাবে বিন্যস্ত করা (বয়সভিত্তিক)
প্রবেশ পথের চারপাশে ১ (এক) মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন চিহ্ন, মাটিতে দাগানো, টেপ, দড়ি এবং অন্যান্য উপায় ব্যবহার করা
শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলার পাঠ কীভাবে পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা
যতটা সম্ভব পাঠগুলোকে শ্রেণীকক্ষের বাইরে সরিয়ে নেওয়া বা কক্ষগুলোতে বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা
স্কুল প্রাঙ্গন ছাড়ার পরে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের জমায়েত না করতে এবং সামাজিকীকরণ না করতে উৎসাহিত করা।
করনীয়
বিধিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে আপনার শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা, এবং করণীয় এবং বর্জ্যনীয় বিষয়গুলোর তালিকা তৈরি করতে এসব বিধিগুলো সহায়ক হতে পারে। শিক্ষার্থীরা একে অপরকে কীভাবে স্বাগত জানাবে, ডেস্কগুলোকে কীভাবে সাজানো হবে, এবং দুপুরের খাবারের বিরতিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পদ্ধতি (তারা কাদের সাথে বসে থাকবে, বিরতিতে কাদের সাথে খেলবে, সপ্তাহব্যাপী কীভাবে তারা তাদের সকল বন্ধুদের সাথে সময় নির্ধারণ করবে) সে সম্পর্কে তাদের চারপাশে একটি তালিকা তৈরি করে রাখা।
স্বাস্থ্য এবং হাত ধোয়া সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি
কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করতে শিক্ষার্থীদের কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত তা নিশ্চিত করতে শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রেণিকক্ষে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় উদাহরণ দেওয়া জরুরি।
জীবাণু ছড়ানোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অত্যন্ত সহজ, ব্যয় সাশ্রয়ী এবং কার্যকর উপায় হলো হাত ধোয়া। এটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা কর্মীদের সুস্থ রাখে।
হাত ধোয়ার পাঁচটি ধাপ সম্পর্কে পড়ান
১. নিরাপদ ও প্রবাহমান পানিতে হাত ভেজানো
২. ভেজা হাতে পর্যাপ্ত সাবান লাগানো
৩. অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাতের সকল অংশ যেমন, হাতের নিচের অংশ, আঙ্গুলের মধ্যে ও নখের নীচে ভালোভাবে ঘষে নেওয়া। হাত ধোয়ার সময়টুকুকে একটি মজাদার অভ্যাসে পরিণত করতে আপনি শিক্ষার্থীদের দ্রুত একটি গান গাইতে উৎসাহিত করতে পারেন
৪. প্রবাহমান পানিতে ভালভাবে হাত ধুয়ে ফেলা
৫. একটি পরিষ্কার কাপড় বা এককভাবে ব্যবহার্য্য তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে হাত শুকিয়ে নেওয়া।
স্কুলে পানির পাত্র, প্রবাহমান পানি অথবা সাবানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকলে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
আপনি কি জানতেন? যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সাবান ব্যবহার করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ঠান্ডা পানি এবং গরম পানি উভয়ই জীবানু ধ্বংসে সমানভাবে কার্যকর!