
সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়া আর নেই।
গত ১১ অক্টোবর, রবিবার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নগরীর নেহারিপাড়ার রায়হান উদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে ফাঁড়ির ইনচার্জকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কোথাও নেই তিনি। খোদ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও জানেন না আকবর হোসেন ভূঁইয়া কোথায় আছেন।
চাঁদা না পেয়ে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি পুলিশ লাইনেও নেই।বন্ধ রয়েছে তাঁর মোবাইল ফোনও।তিনি কোথায় রয়েছেন-তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ ঘটনায় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সন্দেহ করা হচ্ছে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া পালিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৌমেন মৈত্র বলছেন, এখনও যেহেতু মামলা তদন্তে রয়েছে, সেহেতু কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্তে যার নাম পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করা হবে।কিন্তু আকবর এখন কোথায়-সে প্রশ্নের উত্তর মিলেনি তার কাছে।
এদিকে মঙ্গলবার এ মামলার তদন্তভার পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
পুলিশি নির্যাতনে রায়হান হত্যার প্রতিবাদে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায়মঙ্গলবারও মানবন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর আগে সোমবার পুলিশি নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে আরও তিন পুলিশ সদস্যকে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।
এর আগে সোমবার (১২ অক্টোবর) সকালে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী।
স্বজনদের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে ডাক্তারের চেম্বারের কম্পাউন্ডার হিসেবে কর্মরত রায়হান কাজে বের হয়ে যাওয়ার পর রাত ১০টা থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ৪টা ৩৩ মিনিটে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে রায়হান তার মাকে কল করে কথা বলেন। ওই কলে রায়হান কাঁদতে কাঁদতে জানান যে তাকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখেছে এবং টাকা না দিলে ছাড়বে না। এরপরই ভোর সাড়ে ৫টায় চার হাজার টাকা নিয়ে রায়হানের চাচা হাবিব উল্লাহ ফাঁড়িতে গেলে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তাকে ১০টার সময় ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। তিনি ১০টায় টাকা নিয়ে গেলে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজে যেতে বলা হয় এবং সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে ৭টা ৪০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে এবং ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে স্বজনরা তার মর্গে দেখতে পান। তবে রায়হান আহমদের মৃত্যু ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনিতে হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। এদিকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় সিএমপি গঠিত তদন্ত কমিটি জানতে পারে, রোববার রাত ৩টায় আহত অবস্থায় রায়হানকে উদ্ধার করে সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে এনে রাখে পুলিশ। আহত হওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে না নিয়ে পুলিশ ফাঁড়ির হাজতে রাখা হয় এবং আইনগত কোনো পদ্ধতি অনুসরণ না করা হয় না।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, রোববার (১১ অক্টোবর) বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে আখালিয়া এলাকার রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে- এমন অভিযোগ পেয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া স্যার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
কমিটির প্রধান করা হয় এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আলম মামুনকে। কমিটিতে কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী ও এয়ারপোর্ট থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রভাষ চন্দ্রকে সদস্য করা হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা নেয় এসএমপি।