
লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ থেকে:: টাকা ছাড়া ফাইলে হাত দেন না হবিগঞ্জের শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রুহুল্লাহ।
অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে টাকা না পেলে ফাইল রিজেক্ট করে দেন তিনি।
এমপিওভুক্তির ফাইল নিয়ে চরম ভুগান্তিতে পড়েছেন, হবিগঞ্জ জেলা উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষকদের অভিযোগ-মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে সেটি না পেয়ে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ফাইল রিজেক্ট করে দিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রুহুল্লাহ।
এ নিয়ে শুক্রবার রাতে জেলা শিক্ষা ভবনে এসে ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন-নিয়ম বহির্ভুত ফাইল গুলো রিজেক্ট হয়েছে।
জানা যায় করোনাকালীন দুর্যোগ মুর্হুতে নতুন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্য গত রমজান মাসে অনলাইনে আবেদন চায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু এ সময় শিক্ষক কর্মচারীদের আবেদন অগ্রায়ন করতে অধিকাংশ আবেদনকারীর কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রুহুল্লাহ। যাদের কাছ থেকে টাকা পাননি তাদের ফাইল রিজেক্ট করে দেন।
এমনকি কিছু শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও ফাইল রিজেক্ট করে দিয়েছেন। এরপর গত জুন মাসে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীরা ২য় বার আবেদনের সুযোগ পেলে এ সময়ও একই আচরণ করেন তিনি। চলতি মাসে আবারও তারা আবেদন সুযোগ পেলে জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে নতুন এমপিও ও উচ্চতর গ্রেড মিলে প্রায় ২শ’ শিক্ষক কর্মচারী অনলাইনে আবেদন করেন। অনলাইনের প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে অগ্রায়ন করেন বিভিন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারেরা।
কিন্তু গত ২১ আগস্ট ছিল জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আবেদন অগ্রায়ন করার শেষ দিন। ঐদিন বিকেলে আবেদনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা জানতে পারেন তাদের অনেকের ফাইল রিজেক্ট হয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষক তাদের ফাইল রিজেক্টের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি বলে জানান শিক্ষকরা। অথচ ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানে গিয়ে দেখতে পান ফাইল রিজেক্টের কোন কারণ উল্লেখ নেই।
সন্ধ্যায় আবারও শিক্ষক-কর্মচারীরা জড়ো হন শহরের তিনকোণা পুকুর পাড় এলাকায় জেলা শিক্ষা ভবনের সামনে। তবে সেখানে ফাইল রিজেক্টের সঠিক কারণ তিনি বলতে চাননি। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তরপ উচ্চ বিদ্যালয় রামপুর উচ্চ বিদ্যালয় আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আশেরা উচ্চ বিদ্যালয় বানিয়াচং উপজেলার রন্তা উচ্চ বিদ্যালয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
নবীগঞ্জের এনএসপি উচ্চ বিদ্যালয় ও আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীর ফাইল রিজেক্ট হয়েছে।
এ ব্যাপারে তরপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- ‘তরপ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক-কর্মচারি আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ১ জন শিক্ষকের আবেদন বাবদ তিনি জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন।
কিন্তু যারা টাকা দেননি তাদের ফাইল তিনি রিজেক্ট করে দিয়েছেন, বানিয়াচং উপজেলার রন্তা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন- ‘ফাইল রিজেক্টের যে কারণ তিনি উল্লেখ করেছেন তার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। একই রকম আবেদন করে কয়েকজন শিক্ষকের আবেদন অগ্রায়ন করেছেন আর আমাদের ফাইল রিজেক্ট করেছেন একই উপজেলার বক্তারপুর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয়ও কলেজের
প্রধান শিক্ষক কামাল হুসেন বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ কারণ ছাড়াই শিক্ষকদের হয়রানি করছেন। আর তিনি শিক্ষকদের কথা শুনতে চান না শুধু নিজে বলতে চান। যে কারণে সমস্যা বেঁধেছে। প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন জানান- ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ডিইও মোহাম্মদ রুহুল্লাহ শিক্ষকদের হয়রানি করছেন। পাশাপাশি এমপিওভুক্তির নামে তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রুহুল্লাহ বলেন।
আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমি সেই মোতাবেক কাজ করেছি। বিভিন্ন সমস্যার কারণে বেশ কিছু ফাইল রিজেক্ট হয়েছে। তিনি বলেন-ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিত্যা কারণ নিয়মবহির্ভুত ফাইলগুলো টাকার বিনিময়ে পাঠালেও কোন লাভ হবে না। সুতরাং টাকা চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না এছাড়া টাকা চাইলে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।