আজ শুক্রবার, ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি, সকাল ৬:৪৮

গ্রাম থেকে ৫০০ টাকায় কেনা চামড়া শহরে দাম হল ৪০ টাকা

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ১, ২০২০, ০৮:৪৯ অপরাহ্ণ
গ্রাম থেকে ৫০০ টাকায় কেনা চামড়া শহরে দাম  হল ৪০ টাকা

সিলেটের বার্তা প্রতিবেদক:: চামড়া শিল্পে ধ্বস শুধু করোনা কালের এই ঈদুল আযহায় নয়। গতবছর ২০১৯ সালের বকরা ঈদেও ছিল এমন অবস্থা। সিলেটের নিয়মিত চামড়া ব্যবসায়ী আর মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা তো লুকসান গুনেছেন গত ঈদে।

এবছর মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম ক্ষতির মুখে। গ্রামাঞ্চল থেকে গরুর চামড়া প্রতি পিস ৫০০ টাকা দামে কিনেছেন অল্পস্ল্প লাভের আশায়।

কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস। সিলেট শহরে এসে বেপারীরা তাদের ৫০০ টাকা ক্রয়ের চামড়া ৪০ টাকা দর করছেন।

এই পরিস্থিতিতে চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িতরা বলছেন, এভাবে চললে ধ্বংস হয়ে যাবে এ খাত।

এ বছর সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করেছে। সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির কাঁচা চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

আজ শনিবার পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। সিলেটজুটে হাজার হাজার পশু কোরবানি হয়েছে সকালে। দুপুরের পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে। প্রতি বছরই এখানে হাজার হাজার চামড়ার স্তূপ জমে।

শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি রেজিস্ট্রারি মাঠে অবস্থান করে দেখা যায়, গরুর চামড়া একেবারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসি বা বকরির চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনাগ্রহ রয়েছে।

বড় আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৭০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিকোতে দেখা গেছে। কিন্তু ছোট আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দরে চামড়া বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

খুচরো পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা বেশি দাম দিয়ে প্রতি পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা, যারা ট্যানারিতে নিয়ে চামড়া বিক্রি করেন, তারা নানা কারণ দেখিয়ে দাম বেশি দিতে নারাজ। এতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  লালবাজার ও আম্বরখানায় অভিযান, ২০ হাজার টাকা জরিমানা

মো. জুনেদ আহমদ নামের এক চামড়া বিক্রেতা বলেন, ‘প্রতি পিস চামড়া ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা বাইরে থেকে গাড়িভাড়া দিয়ে চামড়া নিয়ে এসেছি। এখন গাড়িভাড়াও নিজেদের ওপর পড়ছে।’

শহরতলির টুকেরবাজারের মৌরশ আলী গ্রাম-গঞ্জ থেকে বেশ কিছু চামড়া কিনে শহরে বেশি দামে বিক্রির আশায় নিয়ে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি প্রতি পিস চামড়া ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে এনেছেন। কিন্তু এখন প্রতি পিস চামড়া বেপারিরা ৪০-৫০ টাকা দর করছেন।

মৌরশ আলী বলেন, ‘৫০০ টাকা দিয়ে প্রতি পিস চামড়া কিনে এনেছি। এখন দাম বলে ৪০-৫০ টাকা। এই দাম ওঠলে চামড়া তো সাগরে ভাসিয়ে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গেলবার ২০ হাজার টাকা লস খেয়েছি। এবার লস খেলে উপায় নাই। চামড়ার দাম একেবারেই নাই এখন, গরীবের যেন মরার পথ!’

যারা সিলেটে খুচরো পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক চামড়া কিনে ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারিতে বিক্রি করেন, সেই চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা তাদের টাকা আটকে রেখেছেন। আগের টাকা পাওনা থাকায় তারা নতুন করে চামড়া কেনায় বিনিয়োগ করতে পারছেন না। মূলত পুরনো পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার আশাতেই এখন কম দামে চামড়া কিনে ট্যানারিগুলোতে সরবরাহ করছেন তারা।

যেমনটি বলছিলেন চামড়া ব্যবসায়ী আকরাম আলী, ‘চামড়া একটা ভালো খাত ছিল দেশের জন্য। সেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গেল বছরও (দাম না পাওয়ায়) অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে। হাজার হাজার চামড়া সুরমা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ বছরও প্রচুর চামড়া নষ্ট হবে।’

তিনি বলেন, ‘‘ট্যানারিগুলোতে আগের টাকাই পাওনা রয়েছে। এবার ফোন করলে তারা বলেছে, ‘চামড়া কিনবেন না, ঢাকা আসলে টাকা দিতে পারবো না।’ এবার ছাগলের চামড়া ট্যানারিগুলো রাখছে না। এক হাজার চামড়া হলে তারা দুই হাজার টাকা বলে।’

আরও পড়ুন:  জাতিসংঘে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার

চামড়া নিয়ে চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা জোরদার এবং বিদেশে রফতানির দিকে মনোযোগী হতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১