
সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৬ নম্বর ফতেহপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লামা ফতেহপুর গ্রামের রাস্তার নামকরণকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর পক্ষে প্রতিবাদ এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি করায় সিলেটের স্থানীয় দুটি পত্রিকার সাংবাদিকের পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছে ওই ইউনিয়নের বিএনপি-জামায়াতের একটি পরিবার।
এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জুন) সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বরাবর দুটি পৃথক অভিযোগ প্রদান করেছেন সিলেটর স্থানীয় দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকার স্টাফ ফটো সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন টিপু ও দৈনিক সিলেটের দিনকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মো. ইসলাম আলী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৬ নম্বর ফতেহপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের মৃত মাওলানা কলিম উল্লাহর পুত্র বিয়ানীবাজার কলেজ ছাত্র শিবিেিরর সাবেক সভাপতি মাহতাব উদ্দিন তাঁর ভাই ইউনিয়ন যুবদলের সহভাপতি আব্দুল্লাহ, ইউনিয়ন শ্রমিক দল নেতা আফতাব উদ্দিন এবং মৃত ইমদাদ উল্লাহর ছেলে এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সাবেক ক্যাডার বর্তমানে পুলিশে কর্মরত ছালেক আহমদ তাঁর ভাই ইউনিয়ন শিবিরের সদস্য জোবের আহমদ ও গোলজার আহমদ। তাদের পরিবার দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। তাঁরা সাংবাদিক মো. ইসলাম আলী ও নিজাম উদ্দিন টিপুকে হত্যার হুমকি প্রদান করে আসছে। হুমকির কারণ লামা ফতেহপুরের রাস্তা তাদের দাদা হাজি আব্দুল গফুরের নামে নামকরণ করতে চায়।
স¤প্রতি তারা তাদের দাদা ‘আব্দুল গফুর’ নামে ফতেহপুর মৌজার লামা ফতেহপুরের রান্তা নামকরণের উদ্দ্যেশে ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরীকে ভুল বুঝিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র নিয়ে যায়। এ কথা গ্রামবাসী জানতে পেরে চেয়ারম্যানকে গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষের জমির উপর দিয়ে নির্মিত করা হয়ে বলে প্রতিবাদ জানালে চেয়ারম্যান সরজমিনে তদন্ত করে মাহতাব ও ছালেকগংকে দেওয়া পূর্বের প্রত্যয়নপত্র বাতিল করে লামা ফতেহপুর রাস্তা নামে গ্রামবাসীকে আরেকটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। মহতাব, ছালেক ও বদরুলগং ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তা কেটে ছোট করে ফেলে। ফলে গ্রামবাসীর চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবগত করলে চেয়ারম্যান নিরূপায় হয়ে বিগত ১৯ এপ্রিল ২০২০ ইংরেজি তারিখে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করছে এই মর্মে প্রশাসনের নিকট গ্রামবাসীর মাধ্যমে একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করেন।
গ্রামবাসীর পক্ষে ১৯ এপ্রিল গোয়াইনঘাট থানায় গণস্বাক্ষরিত একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মো. ইসলাম আলী। সাধারণ ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে গোয়াইনঘাট থানার এসআই কাওছার আহমদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং অভিযোক্তদের রাস্তায় তাদের দাদার নামে নামকরণ করার কারণ জানতে চান। এবং এর পক্ষে কোনো কাগজপত্র আছে কিনা প্রশ্ন করলে কোনো সুদুত্তর না দিয়ে ইসলাম আলীর পৈত্রিক বসতভিটায় জায়গা পায় বলে দাবি করে। এস আই কাওছার আহমদ তখন প্রকাশ্যে বলেন- জায়গা পেতে হলে আইন মেনে আসতে হবে।
লকডাউন থাকাবস্থায় ছালেক ও মাতাবের নেতৃত্বে তাদের বাহিনী নিয়ে ইসলাম আলীর বাড়ির আশপাশে পিলার দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি করে। কোনো আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে গত ১৫মে ইসলাম আলীর বাড়ি হইতে ছালেক-মাতাব বাহিনীর ক্যাডারা বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছের চারা লুট করে নিয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম আলী বাদি হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়েরের কারণে ছালেক-মাতাব বাহিনী আরো বোপোরোয়া হয়ে ওঠে। তারা ১৭ জুন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ইসলাম আলীকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ি ঘেরাও করে। ইসলাম আলী দরজা বন্ধ করে প্রাণে রক্ষা পেলেও তার বাড়ির চারপাশ তাদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে জিম্মি করে রাখে। এবং বাড়ির সামনের রাস্তার জায়গার উপর খাল খনন করে ফেলে। পুরো একদিন বাড়ির ভেতর জিম্মিবস্থায় থাকার পর তার ভাই স্থানীয় দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকা কর্মরত সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন টিপু আরো কয়েকজন সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ভাইকে জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট থানায় নিয়ে যায়। এবং আরেকটি অভিযোগপত্র প্রদান করেন। নিজাম উদ্দিন টিপু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোষ্ট করার কারণে ছালেক আহমদের ভাই গোলজার আহমদ ফেইসবুকে তাঁকেও এলাকায় গেলে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে।
প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ না থাকায় মাতাব-ছালেকগংয়ের সন্ত্রাসী বাহিনী যেকোনো মূহুর্তে ইসলাম আলী ও তার ভাই নিজাম উদ্দিন টিপুকে হত্যা করতে পারে। তাই এই দুই সাংবাদিক সহোদর তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন।