সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: কামরান মানে হাসিমাখা মুখ। কামরান মানে সুখ-দুঃখে ছুটে চলা এক মানুষ। কামরান মানে দলমত নির্বিশেষে সবার প্র্রিয় মুখ। জননন্দিত একটি জীবনের অবসান ঘটে গেল। নীভে গেল সিলেটের আকাশের উজ্জ্বল এক তারা। সিলেটবাসীর সুখ-দুঃখের ভাগিদার। সবার সুখে হাসতেন যিনি। কাঁদতেন সবার দুঃখে।
কবির ভাষায়-‘এমন জীবন তুমি করো হে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন’
সত্যিই বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুর খবরে শোকাহত সিলেটবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকই তাঁর প্রমাণ বহন করে। প্রিয় এই মানুষটির মৃত্যুতে মানুষজন যে অমূল্য রতনকে হারিয়ে যে দুঃখ পেয়েছেন। তাঁকে নিয়ে যে ব্যথার কথা সিলেটবাসী লিখছেন।
এককথায় ফেসবুক একটি শোকবইয়ে পরিণত হয়ে উঠেছে।
ষাটের দশকে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়া এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ ১৯৭৩ সালে যখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র তখন শুরু হয় দেশের প্রথম পৌর নির্বাচন। এ সময় তিনি সিলেট পৌরসভায় ৬৪৪টি ভোট পেয়ে তোপখানা ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হন। সে সময় সিলেট শহরে মাত্র ৫টি ওয়ার্ড ছিল। তোপখানা ছিল ৩নং ওয়ার্ডের অধীন। এরপর ১৯৭৭ সালে আবার নির্বাচন হলো। কমিশনার নির্বাচিত হলেন তিনি।
তারপর কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে চলে গেলেন কামরান। দেশে এসে ১৯৮৯ সালে আবারও নির্বাচনে অংশ নিলেন। তখনও তিনি একই ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। তখন তার প্রতীক ছিল আনারস।
সেই সাফল্যের পথ ধরে এভাবে ১৯৯৫ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিজ দল ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি দুইবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন। কিন্তু ২০১৩ সালে নিজ দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিরোধী দলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় মেনে নিতে হলো সাবেক জনপ্রিয় এই মেয়রকে।
করোনার ভয়ে যখন নেতা-নেত্রী স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে জনতার কামরান তখন খাদ্য সহায়তা নিয়ে মাঠে ময়দানে জনতার পাশে। আর এরই ধারাবাহিকতায় এক সময় কামরান ঘাতক করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে চলে আসেন।
গত ৫ জুন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ওইদিন রাত থেকে প্রথমে বাসায় আইসোলেশনে রাখা হলেও ৬ জুন সকালে বমি আর জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে বমি ও জ্বর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়াতে রবিবার (০৭ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। ঢাকায় তাকে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হলে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল। ১৪ তারিখ রাত সাড়ে দশটায় তাঁর মস্তিকে রক্তক্ষরণ হয়। এই অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে তিনি এই নশ্বর পুথিবীকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান।
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মুত্যু মানে একটি নক্ষত্রের পতন। তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন সিলেটের মানুষের অন্তরে।