গোয়াইনঘাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা:: সিলেটের গোয়াইনঘাটে উজানের পাহাড়ি ঢল আর বানের পানিতে পানিবন্দী রয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশী মানুষ। এখন পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
বুধবার ও মঙ্গলবার রাতে ফের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে আসাম পাড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রক বাধে ভাঙ্গন,জাফলং বাউরভাগ হাওরের বেড়িবাধে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে করে বেড়িবাধের ভেতরে বসবাসরত সহস্রাধিক বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাধটির ভাঙ্গনস্থলের কয়েকটি বাড়ি মুহুর্তেই নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বানের পানির তোড়ের সাথে ভেসে গেছে গবাদি পশু,আশপাশের সবকটি মৎস্য খামারের মাছ। মঙ্গলবার রাতের পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতের তীব্রতায় বাউরভাগ গ্রামে পিয়াইন নদীর ভাঙ্গন মারাত্মক আকার ধারণ করে। এতে করে বাশঝাড়সহ নদীর তীরবর্তী বেশ কিছু জমি পিয়াইন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি থাকায় সিলেট-সারী-গোয়াইন,সালুটিকর-গোয়াইনঘাট-জাফলং-রাধানগর,গোয়াইনঘাট-সোনারহাট সড়কে বিভিন্ন স্থানে পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব সড়কে ভাঙ্গনের ফলে গর্তের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্রিজ সমুহে এপ্রোচের মাটি সরে গিয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পানিবন্ধি মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। নিজেদের পাশপাশি গৃহপালিত গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শত শত পরিবারের মানুষজন। স্থানীয়দের সাথে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপকালে তাদের সুত্রমতে জানা যায় পাহাড়িঢলে পানি ওঠেছে কম পক্ষে ১৫শত ঘরবাড়িতে এবং ২ হাজারের বেশি কাচা পাকা ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পুর্ন বিধ্বস্থ হয়েছে। এদিকে একই দিন দিবাগত রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ টর্নেডোর তান্ডবে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে গোটা গোয়াইনঘাট উপজেলায়। উপজেলা সদর গোয়াইনঘাট,পশ্চিম জাফলং,পুর্ব জাফলং,আলীরগাও,লেঙ্গুড়াসহ সবকটি ইউনিয়নেই তান্ডব চালিয়েছে টর্নেডো।
এতে করে কাচা,পাকা ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে,শতশত গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে,বৈদ্যুতিক খুটিসহ মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। বন্যার পানির কারণে উপজেলা সদরের সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গতকাল সরজমিনে বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য বাউরভাগ হাওর এলাকার বেড়িবাধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়িঢল সৃষ্ট বন্যার পানিতে বেড়িবাধটির বিশাল এলাকা ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গনস্থলে গভীর হয়ে পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।
সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেখানে নৌকা দিয়ে চলছে এলাকাবাসির যাতায়াত। বেড়িবাধের গোড়ায় বসবাসরত দুটি বাড়ির ৬টি ঘর বানের পানির তোড়ে নদী গর্ভে বিলীর হয়ে গেছে। পানি ঢুকে নিমজ্জিত রয়েছে বাধের ভেতরে শতাধিক বিঘা জমির রোপায়িত কাচা-পাকা ইরি ফসল। চোখে পড়ে অগণিত মৎস্য খামার। খামারিরা জানান,আকষ্মিক ঢল নেমে বেড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের খামারের সব মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ভাঙ্গনস্থলের কাছের বাসিন্দা ওসমান আলী ও আব্দুল আলীম জানান,মঙ্গরবার দিবাগত রাত ১১টায় প্রবল বেগে ছুটে আসে পাহাড়ীঢল। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তাদের ৬টি ঘর। ভাসিয়ে নিয়ে যায় গোয়াল ঘরে থাকা গবাদি পশু। শতাধিক ঝুলন্ত কাঠাল নিয়ে ভাঙ্গনস্থলে বিধ্বস্থ গাছের দিকে তাকিযে ফুফিয়ে কেদে ওঠেন ক্ষতিগ্রস্থ ওসমান আলী।
দরিদ্র এসব মানুষজনের সাথে প্রকৃতির এমন বৈরিতায় তার মতো আবেগ তাড়িত দেখা যায় উপস্থিত স্থানীয়দেরও। মঙ্গলবার উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের মাটিকাপা সড়কের ভাঙ্গনস্থলে বানের পানির তোড়ে নিখোজ ওসমানীর এখনো কোন সন্ধান মেলেনি। নিখোজ ব্যক্তির সন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম বুধবার সারাদিন কাজ করলেও তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুস সাকিব জানান,নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও গোয়াইনঘাট জুড়ে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যা আর টর্র্নেডো সৃষ্ট দুর্যোগের ক্ষতি হয়েছে মারাত্মক। সবকটি ইউনিয়নে সার্বিক খবর নিয়েছি। বন্যা ও টর্নেডোতে উপজেলায় এখনও পর্যন্ত ৯২টি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ,৩৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ এবং ৯৭৫টি গাছপালা ভেঙ্গে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। পাহাড়িঢল ও টর্নেডোর সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সর্বত্র মানুষজনের নিরাপত্তা জোরদারসহ জরুরী ত্রান সহায়তায় সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত আছে।