আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, রাত ১০:৩৪

প্রবাসে ভার্চুয়ালি ঈদ-২০২০

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত মে ২৪, ২০২০, ০৫:০৪ পূর্বাহ্ণ
প্রবাসে ভার্চুয়ালি ঈদ-২০২০
ঈদ মানে প্রীতি-সম্প্রতি, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন। ঈদের আগমনে মুমিন মুসলমানের অন্তরে বয়ে যায় আনন্দ-উল্লাস আর উচ্ছাসের বাঁধভাঙা জোয়ার। নিভিয়ে ফেলে হিংসা-বিদ্বেষ, দম্ভ-অহংকার, কাম-লোভ ও রাগ-ক্রোধের আগুন। ভুলে যায় উঁচু-নিচু, আমির-ফকির আর ধনী-গরিবের ভেদাভেদ। সবাই হয়ে যায় ভাই ভাই, আপন। মেলায় হাতে হাত। করে কোলাকুলি। একজন আরেকজনকে টেনে নেয় বুকে। কণ্ঠে বাজে শান্তি, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব আর সাম্যের গান। সারা মাস রোজা রেখে মুমিন মুসলমান আল্লাহর দরবারে পেশ করে ত্যাগের সর্বোচ্চ নজরানা। এতে তারা হয়ে ওঠে আরও উজ্জীবিত। তারা মহান আল্লাহর অপরসীম গুণ-কীর্তন ও স্তুতি-বন্দনা করে। বছর পেরিয়ে পবিত্র রমজান শেষে আমাদের দোরগোড়ায় মহিমান্বিত সেই ঈদ। কবি নজরুলের ভাষায় ঈদের আনন্দ আজ সকলের মাঝে পড়ুক ছড়িয়ে। হিংসা-বিদ্বেষ, ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে জাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মিলিত হই ঈদের এই সীমাহীন আনন্দ-উৎসবে।
‘ঈদুল ফিতর’ শব্দ দুটি আরবি। যার অর্থ হচ্ছে উৎসব, আনন্দ, খুশি ও রোজা ভঙ্গকরণ প্রভৃতি। সুদীর্ঘ একটি মাস কঠোর সিয়াম সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগির পর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ রোজা ভঙ্গ করে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ ধরণীতে যে আনন্দ-উৎসব পালন করেন, সেটিই ঈদুল ফিতর।
সংযমের মাস থেকে আমাদের সংযম শিক্ষা নেওয়া উচিত। ভ্রাতৃত্ব, সাম্য আর মানবতার বার্তা নিয়ে প্রতিবছর আসে ঈদুল ফিতর। ঈদ আসে আনন্দ আর খুশির ডালি নিয়ে; কিন্তু সে আনন্দ একার নয়, সবার। দুস্থ-অভাবী মানুষের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ার প্রেরণা দেয় ঈদ। ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী-পরে-সকলের তরে সকলে আমরা, ‘প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ এই চিরন্তন সাম্য-চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষা পাই ঈদ থেকে।
আজ আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে, আমরা কি পেরেছি হিংসা-বিদ্বেষ আর রাগ ক্রোধ ঝেড়ে ফেলতে। পাপ-পঙ্কিলতা মুছে ফেলতে। পেরেছি কি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করতে। সবার মাঝে ঈদের অনাবিল আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে দিতে। এখন বাঙালি মুসলমানের ঘরে-ঘরে জনে-জনে চলছে ঈদের আনন্দ বারতা। সৌহার্দের, ভ্রাতৃত্বের আর সম্প্রীতির এই আনন্দধারায় সবাইকে ঈদ মোবারক। মুসলমানের সবচেয়ে বড় এই আনন্দ-উৎসব সামাজিক সম্প্রীতি আর সাম্যচেতনায় ভাস্বর। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দে শামিল হবে- এটাই এই ঈদের মর্মবাণী।
আমরা জানি ঈদ মানে আনন্দ, উৎসব ও আয়োজন। তবে এ বছর ঠিক বিপরীত একটি ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি আমরা। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য এমন বিবর্ণ একটা ঈদ এসেছে, যা আগে কখনো আসেনি। এবারের ঈদ হবে কষ্টের, এবারের ঈদ হবে বেদনার। এবারের ঈদ স্বজন হারানোর এবং বন্দী দশার মধ্যে ঈদ হবে। করোনা দিনের ব্যতিক্রমী এক ঈদ হতে যাচ্ছে আমাদের স্পেনে। কারণ স্পেনে লকডাউন ৭ জুন পর্যন্ত চলবে। সুতরাং সোশ্যাল ডিস্টান্সিং (সামাজিক দূরত্ব) মেনে চলতে হবে সবাইকে। কোথাও ঈদের জামাত হবে না। ঘরে বসেই ঈদের নামাজ পড়তে হবে। দশজনের বেশি একত্রিত হতে পারবে না। দুই মিটার দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে নতুন পোশাক। ঈদ মানে মায়ের কাছে যাওয়া। ঈদ মানে স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো। কিন্তু এবার সেই অনাবিল আনন্দের আবহ নেই। খুশির জোয়ারও নেই। সবকিছু থমকে গেছে। দেশে বিদেশে অনেকে মারা গেছেন। অনেকেই হাসপাতালে রোগ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। স্বজন হারানোর বেদনা সর্বত্র। এই বৈশ্বিক মহামারী পৃথিবী থেকে খনিকের জন্য যেন সব আনন্দ তোলে নিয়ে গেছে। কিন্তু তবুও ঈদ এসেছে।
যারা করোনা মাথায় করে ঈদের কেনাকাটা করেছেন, তারা অনলাইনেই বন্ধুদের কাপড়-মেকআপ দেখিয়ে দিতে পারেন। খামোখা বন্ধুর বাড়ি গিয়ে করোনা ছড়িয়ে লাভ নাই। ডিজিটাল এই দুনিয়ায় আপ্যায়ন, গল্প, ডেটিং, শুভেচ্ছা ও উপহার বিনিময় সবই চলতে পারে ভার্চুয়ালি।
আমরা যারা দূর প্রবাসে থাকি এখানেও রোজা আসে, তারাবি হয়, ইফতার পার্টি হয়। সবকিছুই হয়। কিন্তু কোনোভাবেই তা দেশের মতো না। দেশে যেমন রোজা শুরু হলেই একটা উৎসবের আমেজ তেরি হয়। কেনাকাটা, ঈদের বোনাস, লাইটিং, ঈদ ফ্যাশন, ঈদ সংখ্যা পত্রিকা, টিভিতে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠান, ঈদ পুনর্মিলনী, সিনেমা হলে নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়া কত কি। প্রবাসে এসব কিছুই নেই। প্রবাসে ঈদের দিনটা উইকএন্ডে হবে কিনা এই নিয়ে চলে গবেষণা। কারণ উইকডেতে হলে ঈদের দিন কাজে যেতে হবে। বাচ্চাদের যেতে হবে স্কুলে। দেশে যখন সবাই ঈদ উৎসবে মেতে থাকবে তখন প্রবাসে আমাদের থাকতে হয় কর্মস্থলে। কখন ঈদের দিনটা চলে যায় টেরও পাওয়া যায় না। বাসে-সাবওয়েতে বসে বা গাড়ির ড্রাইভিং সীটে হাত রেখে আর চোখের জলে বাবা-মা, ভাই-বোনদের কথা মনে পড়ে যায়। যারা বাবা-মাকে হারিয়েছেন বা হারিয়েছেন কোন আপনজনকে তাদের কথা বেশি বেশি মনে পড়ে এই দিনে। প্রবাসে অনেক সন্তান হারা মা লুকিয়ে কাঁদেন। তার যাদুসোনা আর ফিরবে না এই আনন্দের দিনে।
যে যুবকটি তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে দেশে রেখে এসেছে, তার কি খুব কষ্ট হবে না! যাদের বৃদ্ধ মা-বাবা, ভাই-বোন রয়েছে দেশে, কোনো এক নির্জন মুহূর্তে সে-কি চোখের পানি ফেলবে না! বিশেষ করে প্রবাসী মেয়েরা ভীষণভাবে মিস করবে তার আত্মীয়-পরিজনকে। কেউ কেউ ঈদের দিন কাজের মধ্যেই আনমনা হয়ে পড়বে। বাসে, সাবওয়েতে চলার সময় খুব গোপনে একটু কেঁদে নেবে। অনেকেই ঈদের দিন আপনজনদের ফোন করবে। সার্কিটগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়বে। যে মায়ের একমাত্র মেয়ে বা একমাত্র ছেলে বিদেশ থেকে ফোন করবে সেই মার কণ্ঠ জড়িয়ে আসবে আবেগরুদ্ধ কান্নায়। যে ব্যক্তি অনেকদিন তার স্ত্রী-সস্তানকে রেখে এসেছেন তার বুকটা কি ভেঙে যাবে না!
আনন্দ-বেদনার ঈদের নাম হচ্ছে প্রবাসের ঈদ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজের মতো করে আনন্দ খুঁজে নেয় প্রবাসীরা। তারাও ঈদের নামাজ পড়ে, কোলাকুলি করে, বেড়াতে যায় বন্ধুর বাড়িতে। কিন্তু তারা প্রিয়জন থেকে অনেক অনেক দূরে। তাদের শূন্যতা কিছু দিয়ে পূরণ হবার নয়।
এই করোনার কারণে সৃষ্ট অভাব আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিল ‘সাধ্যের বাইরে যে সাধ তা কোন কালে পূরণ হবার নয়, সাধ্যের মধ্যেই আছে সকল সত্য।’ আসুন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি। আর সেটাই হবে এই করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে ভার্চুয়াল ঈদের আনন্দ।
আরও পড়ুন:  ১৭ দিনে ১৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এলো

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১