আজ সোমবার, ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি, সকাল ৮:৩৮

অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা নিয়ে স্পেনের সিনেটে আলোচনা

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত মে ২১, ২০২০, ০৩:৩৭ অপরাহ্ণ
অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা নিয়ে স্পেনের সিনেটে আলোচনা

অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা নিয়ে স্পেনের সিনেটে আলোচনা শুরু হয়েছে।

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব বিরাট অর্থনৈতিক সঙ্কটের শঙ্কায় রয়েছে। সেদিক থেকে ব্যতিক্রম নেই ইউরোপীয় উন্নত দেশগুলো।

সেই সঙ্কট মোকাবিলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ অনেক রকম প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ দেশ গুলোতে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি বিশেষ করে অবৈধ ভাবে বসবাসকারীরা আছেন চরম বিপাকে। আর তাদের কথা মাথায় রেখেই ইতালি এবং পর্তুগাল ইউরোপের এই প্রথম সারির দেশ দুটো তাদের অভিবাসী নাগরিক আইনে কিছুটা লাগুবতা এনে বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতা মঙ্গলবার (১৯ মে) স্পেনের সংসদ অধিবেশনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতাকরণে একটি প্রস্তাব উঠেছে।

সিনেটর পিকরনেল গ্রেন্সনা দেশটির অভিবাসী বিষয়ক মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এই প্রস্তাবটি আনেন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি শুরু হবার পর সরকার জোর দাবী দিয়ে বলে যাচ্ছে এই ভাইরাস আমরা সবাই একত্রে মিলে প্রতিহত করবো এবং এর থেকে কাউকে পিছনে পড়ে থাকতে দিবে না। সরকার যদি আসলেই তা মনে করে তাহলে স্পেনে যত অবৈধ অভিবাসী আছে তাদের সকলকেই এখন বৈধতা প্রদান করা উচিত। যদি বৈধ কাগজ না থাকে তাহলে তারা তাদের অধিকার ঠিকমতো আদায় করতে পারে না। এটা আসলে এই সময় খুবই বড় ভাবনার বিষয়, বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর এই মহামারীর সময়। যদি কাগজ না থাকে তাহলে কাজ থাকে না, থাকেনা একটা ভালো বেতন, কোন ভালো বাসা থাকেনা, না থাকে একটা মর্যাদাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। যা সমাজ থেকে তাদের আলাদা করে দেয়, তাই আমাদের এদের প্রয়োজনে যা কিছু করা দরকার তা করা উচিত।’ তিনি পর্তুগাল এবং ইতালির উদাহরণ টেনে দেখান যে বর্তমান এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই দুই দেশের সরকার তাদের দেশের অভিবাসীদের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

জবাবে দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা ও অভিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী খোসে লুইস এসক্রিভা বেলমন্তে জানান, ‘পর্তুগাল বা ইতালি যা করেছে তা কিছু শর্তাবলীর উপরে করেছে। ইউরোপীয় রিফুজি অধ্যাদেশ ২০০৮-এ বলা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সাধারণ ভাবে অভিবাসীদের বৈধ করা যাবে না। এবং তা এখনো কেউ ভঙ্গ করেনি। তবে একটু ব্যাতিক্রমী ভবে পর্তুগাল যা বের করেছে এটা স্পেনের সাথে সামঞ্জস্য করার কিছুই নেই, কেননা পর্তুগালে যাদের বৈধ কাগজ নেই তারা চিকিৎসা সেবা পায় না কিন্তু স্পেনে সেটা পায়। আর যা ইতালি করছে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা ধরে রাখাতে তার দেশের কৃষি খেতে কাজ করার জন্য লোক নিচ্ছে, এটাও স্পেনে সাথে যায় না, কেননা স্পেন অস্থায়ী ভিত্তিতে অবৈধ বসবাসকারী ১৮ থেকে ২১ বছরের মানুষদের জন্যও মাঠে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। উল্লেখ্য এদুটি কারনেই স্পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ আইনের কোন ক্যটাগরিতে পড়ে না, তাই স্পেনের পক্ষে বিশেষ কোন প্রস্তাবনায় এদেশে অবৈধ জনবলকে বৈধকরণের কোন সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন:  আমেরিকার টেক্সাস সিটির সানাবিল ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে গোয়াইনঘাটে কম্বল বিতরণ

তবে মন্ত্রী সিনেটরকে পুরোপুরি আশাহত করেননি, কিংবা তার প্রস্তাবটি পুরোদস্তুর উড়িয়ে দেননি। তিনি সিনেটরের প্রস্তাবনা গ্রহণ সহিত জানান, তার সরকার ইতিমধ্যে এই প্রস্তাবনার আলোকে কাজ করে যাচ্ছে, এবং তারা নিজেরা আরো খুঁজে দেখছেন যদি আরো কিছু করা যায়। তারা কিছু সুবিধা ব্যবস্থা পেয়েছেন আর দেখছেন যদি আরো কিছু পাওয়া যায়। বিশেষত ব্যাক্তিগত ভাবে রাষ্ট্রের অভিবাসী সচিব এই বিষয়ে কাজ করছেন এবং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বিষয়টির উপর অবগত আছেন।

দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানায়, স্পেনে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার অভিবাসীবান্ধব সরকার হিসেবেই পরিচিত। বর্তমান সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারের আমলে ২০০৫ সালে অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।

২০১৬ সালের ২৪ জুন স্থানীয় গণমাধ্যম ‘ইউরোপা প্রেস’ এ দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান পেদ্রো সানচেজ। অবৈধদের বৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করার ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহের কথা বলেছিলেন তিনি।
বর্তমানে ক্ষমতায় আছে সোশ্যালিস্ট পার্টি। তাই তারা অভিবাসন নীতি নমনীয় করবে- এমনটি প্রত্যাশা করছেন স্পেনের অভিবাসীরা।

দেশটিতে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা নিবন্ধনকৃত মানবাধিকার সংগঠন ‘ভালিয়েন্তে বাংলার’ সভাপতি ফজলে এলাহি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে পুরো স্পেনে প্রায় ১০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি আছেন, তারা স্পেনে বসবাস করার অনুমোদন পাবার অপেক্ষায় আছেন। স্পেনের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে এ সরকারের কাছে আমরাও দাবি জানিয়েছি, যাতে অভিবাসীদের সহজ শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।’

প্রধানমন্ত্রী সানচেজ তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করলে স্পেনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি রয়েছে বলে জানান ফজলে এলাহি।
বাংলাদেশী সমাজকর্মি ও অনুবাদক নাসিরুল ওয়াহাব অপু বলেন, ‘সরকার এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে হয়তো অচিরেই আমরা ভালো সংবাদ পেতে পারি অবৈধ অভিবাসী দের বৈধ করার বিষয়ে।’

অতীতে দেখা গেছে, সোশ্যালিস্ট পার্টি যখন স্পেনের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে তখন অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ে। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান খসে লুইস রদ্রিগেজ জাপাতেরো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময় অবৈধ অভিবাসীরা সহজ শর্তে স্পেনে বসবাসের বৈধতা পেয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৫ সালে সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা পেয়েছেন কয়েক হাজার অভিবাসী।
ইতিমধ্যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো স্পেনে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে ।

আরও পড়ুন:  লন্ডনের ইকরা বাংলা টিভিতে মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি হুজুরের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, বছরের পর বছর অবৈধ অভিবাসীরা ব্যবসাসহ বিভিন্ন রকমের পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অথচ এসব অবৈধ অধিবাসীদের বৈধতা দিলে বৈধ কাজ করে নিয়মিত সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করতে পারবে। এতে দেশটির অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
স্পেনের অর্থনীতির মূল খাতগুলোর মধ্যে কৃষি ও পর্যটন শিল্প প্রধান। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু থেকেই দেশটির পর্যটন শিল্পে ধস নামে। পুরো স্পেন বর্তমানে পর্যটকশূন্য অবস্থায় রয়েছে। কৃষিখাতেও ধ্বংস অবধারিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কাস্তিইয়া লা মানছা, ভ্যালেন্সিয়াসহ কয়েকটি এলাকা কৃষিকাজের জন্য প্রচুর কাজের লোকের সঙ্কট শুরু হয়েছে।

স্পেনের অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, দেশটিতে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশিসহ অবৈধ হয়ে পড়া মোট অভিবাসীর সংখ্যা ২ লাখ। দেশটির এই দুঃসময়ে সরকারের কাছ থেকে আশার কোন নতুন সূর্য দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন এই বিপুলসংখ্যক অভিবাসীরা।

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১