সিলেট ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

করোনায় মধ্যবিত্তের করুণ কাহিনী

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত মে ৩, ২০২০, ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ
করোনায় মধ্যবিত্তের করুণ কাহিনী

মো. নুরুল হক, অতিথি লেখক:: করোনাভাইরাস এক বৈশ্বিক মহামারী। করোনা আজ ধনী-গরীব, মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত নির্বিশেষে সবাইকে এককাতারে করে দিয়েছে। করোনাকালে অন্যদের চেয়ে করুণ অবস্থা মধ্যবিত্তদের।

এ মহাদূর্যোগময় করোনাকালে সমাজের একটা শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এক করুণ অবস্হা বিরাজ করছে।এ শ্রেণীর মানুষগুলো যেন মরতেও পারছেনা, আর না পারছে বাঁচতে।
জীবন-মরণ তো সব সৃষ্টিকর্তার হাতে।কাকে, কখন করোনা নামক ভাইরাস আক্রমন করে বসে- সেটা কেউ জানেনা।যেমনটি জানেনা-কার মৃত্যু কখন হবে।
কিন্তু, এ করোনাকালে সমাজের একটা শ্রেণী যেন চায় – এ সময়ে এমন অবস্হায় তার জন্যে যেন বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া-ই ভাল।আক্ষেপ করে কেউ-কেউ হয়তো বলেই ফেলে- ‘করোনায় এত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আল্লাহ আমাকে কি চোখে দেখেনা?!এ শ্রেণীটির নাম ‘মধ্যবিত্ত ‘।

নিম্নবিত্ত, উচ্চবিত্ত নির্বিশেষে সবার জীবনেই কোননা কোন সময়ে আনন্দের হাসি আসে। যেমন- এ করোনাকালে দু ‘মুঠো ত্রাণ পেয়ে নিম্নবিত্তের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।আর উচ্চবিত্ত বা সামর্থবান হৃদয়বানেরা ত্রাণ দিয়ে পরিতৃপ্তি পায়, তাঁর অন্তরের গভীর থেকে তৃপ্তির হাসি বেরোতে পারে।কিন্তু, ঐ যে মধ্যবিত্ত! সে তো ত্রাণ দিতেও পারছেনা, নিতেও পারছেনা।সে কিসের ভিত্তিতে, কোন্ হাসি হাসবে?
তবে – এ সময়ে তাঁর অতীতের কথা অবশ্যই মনে-মনে ভাবে।কোন এক সময়ে হয়তো সে নিম্নবিত্তের সারিতে ছিল।ভাবে- ‘ঐ সময়টাই ভাল ছিল। এখনও যদি ঐ সময়টার মত অবস্হানে থাকতাম, তাহলে এখন, এ দুঃসময়ে, এ করোনাকালে ত্রাণেন জন্যে লাইনে দাঁড়ালেও কারো বলার কিছু থাকতনা ‘।আর আত্মমর্যাদাবোধ তো তখন তাঁর কাছে কোন ভাববার বিষয়ই থাকতনা।হয়তোবা কোন এক সময়ে সে উচ্চবিত্ত-ই ছিল।এখন মনে-মনে ভাবে – ‘আমার অবস্হা যদি আগের মত থাকতো, তাহলেতো করোনার এ দূর্যোগকালে আমিও ত্রাণ বিতরণ করে নিজের নাম জাহির করতে পারতাম ‘।
তবে, এসময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণীটা অপাঙতেয় থাকলেও ত্রাণসামগ্রী -চোরদেরকে সমাজের এই শ্রেণীটা-ই সব ‘চে বেশি ঘৃণা করে, যদিও মধ্যাবস্হানের কারণে তাঁর এ ঘৃণার প্রকাশ প্রকৃত অর্থে করতে/ করাতে সে অ-সমর্থ-ই।
আর নিম্নবিত্তরা যা-ই, কিছু ‘ পেয়েই তৃপ্ত। উচ্চবিত্তরা ‘যা-ই-কিছু ‘দিয়ে তৃপ্ত।বরং, কেউ-কেউ ত্রাণচোরদের চুরিকাজে পৃষ্ঠপোষকতা এবং সহায়তা করে থাকে।তারা এসব ঘৃণিত কাজকে ঘৃণাও করেনা, যেমনটি করে থাকে /করতে হয় একজন মধ্যবিত্তকে।অর্থাৎ- একজন মধ্যবিত্তের কখনো-কখনো কারো-কারো কাছে ঘৃণার পাত্র হিসেবে পরিচিতি ঘটে, ঠিক তেমনটি-ই সে কাউকে-কাউকে ঘৃণা করার পাত্রও বটে।কিন্তু এক্ষেত্রে একজন নিম্মবিত্ত বা উচ্চবিত্তের অবস্হান সুস্পষ্ট নয়।
সমাজে এ অবস্হাগত স্বচ্ছতার কারণেই এ শ্রেণীটির ‘মধ্যবিত্ত ‘ হিসেবে পরিচিতি সুস্পষ্ট।
মধ্যবিত্তরা হাসে কম, কাঁদে বেশি।হাসতে চাইলেও হাসি পায়না।তাঁর জীবনের প্রতিটি পরতে-পরতে কান্না যেন তাঁকে লেপটে ধরে অাছে।এ কান্নার আওয়াজ স্পষ্ট নয়।অস্ফুট-ক্রন্দনরোল আজীবন যেন চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
এ কান্নার আওয়াজ স্পষ্ট হতে মানা।কেননা- ‘লজ্জ্বা ‘নামক অনুভুতিটুকু যে তাঁর মর্যাদাবোধে হানা দেবে!আর এজন্যই এ সময়ে বলা যায়- ‘সমাজে মধ্যবিত্ত হলো – কারো কাছে হাত পাতা কিংবা কারো জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতাহীন এক অপাঙতেয় শ্রেণী ‘।

কাহিনী-০১. আজগর আলী। দুই ছেলে, এক মেয়ের বাবা।ছোট তিনটা সন্তানই লেখাপড়ায় খুব ভাল, মেধাবী।
গ্রামে নিজের জমিতেই কৃষিকাজ করে মধ্যবিত্ত পরিচয়ে পরিচিতি পাওয়া আজগর অালী পৈত্রিক সম্পত্তির সবটুকু বিক্রি করে শহরে চলে এলেন সন্তানদের ভাল স্কুলে লেখাপড়া করনোর জন্যে।শহরে এক চিলতে জমি কিনে সেই জমিতে একটি টিনের ঘর তুলে পরিবার নিয়ে তাঁর বসবাস।যেখানে তাঁর বাস সেখানটায় কোন উচ্চবিত্ত নেই।সেখানকার জন্য তিনিই ইতোমধ্যে মধ্যবিত্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।তাঁর চাল-চলনে অনেকেই তাঁকে আবার উচ্চবিত্তই মনে করেন, সমীহ করেও চলেন।তাঁর ঘরের সম্মুখভাগের ছোট্ট একটি চিলতে কোঠায় কিছু মুদিমালের ব্যবসার আয় আর প্রাইমারীর গন্ডি পেরোনো গার্মেন্টস এর চাকরিজীবি বড় ছেলেটার স্বল্প আয়ের উপর নির্ভর করে কোন রকমে ‘মধ্যবিত্ত ‘পরিচয়ে টিকে আছেন আজগর আলী।করোনার কারণে ছেলের গার্মেন্টস বন্ধ, চাকরি নেই।ছোট্ট মুদি দোকানটিতেও আগের মত আর বেচা-কেনা নেই।এ সময়ে আজগর আলী ‘র মত মধ্যবিত্তরা আছেন মহাবিপদে।
এদিকে দিনের প্রারম্ভে আজগর আলী ‘র স্ত্রী তাহমিনার তাগিদ- ‘ কী গো, ঘরে তো বাজার -সদাই কিছুই নেই।একটা কিছু ব্যবস্হা করবে তো’!স্ত্রী হিসেবে আজগর আলীর সামর্থের নাড়ি-নক্ষত্র সবকিছুই তো তাহমিনা জানে। কিন্তু—–?
সন্তানদের মুখে যৎসামান্য খাবার দেয়ার ব্যবস্হা করে দু ‘তিনদিন স্বামী- স্ত্রীতে উপুস কাটানোর পর একদিন তাহমিনা স্বামী আজগরকে কানে-কানে বলল- ‘ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণ দিচ্ছে, ওখান থেকে কিছু আনতে পার কি না – দেখনা গো ‘।
আজগর আলী তাঁর মধ্যবিত্তের লেবাসের আড়ালে জমানো লজ্বা-শরমের মাথা খেয়ে কাঁধের পুরনো গামছাটা দিয়ে মুখমন্ডল প্রায় ঢেকে ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণ বিতরণের লাইনে গিয়ে দাঁড়াল।ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং চেয়ারম্যান সাহেবের চ্যালা-চামুন্ডারা, মহান(?) ব্যক্তিরা তাঁদের এ মহৎ(?) কাজের প্রচারণার উদ্দেশ্যে আজগর আলী কর্তৃক ত্রাণ গ্রহণের ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিল।
রাতে আজগর আলী ‘র স্কুল পড়ুয়া মেয়ের পাশের বাড়ির বান্ধবী নার্গিস ফেসবুকের এ ছবি নিয়ে এসে আজগর আলীর মেয়ে শিউলিকে দেখিয়ে বলল- ‘এই শিউলি দেখ্, দেখ্।তোর বাবার ত্রাণ গ্রহণের ছবি ফেসবুকে এসেছে।কী সুন্দর না?!
আজগর আলী “র এ ছবি আর শিউলির বান্ধবীর এ কথায় কতটুকু সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে -তা আজগর আলীর মেয়ে শিউলিই ভালো জানে। আর সবচে’ ভাল জানে একজন কথিত মধ্যবিত্ত আজগর আলী।
নার্গিস তার সমবেদনা প্রকাশের এ কাজটি(?) সেরে চলে যাবার পরক্ষণেই শিউলি তার বাবাকে অনেকটা ক্ষুব্ধ কন্ঠেই বলল – ‘বাবা, তুমি কিনা শেষ পর্যন্ত ত্রাণের জন্যে লাইনে দাঁড়ালে ‘?!
এ অ-সময়ে মেয়ের এ সামান্য কথা-ই অসামান্যভাবে আজগর আলী ‘র মধ্যবিত্ত-অনুভুতিতে আঘাত হেনেছে।রাত শেষে দেখা গেল – বাড়ির পিছনের আমগাছটিতে আজগর আলী ‘র লাশ ফাঁসিতে ঝুলছে! কারণটা কোনভাবেই প্রকাশ পেলনা।কেননা- আজগর আলী যে ‘মধ্যবিত্ত ‘।

কাহিনী-০২. পারভিন ভানু ‘র স্বামী সিকান্দর মধ্যপ্রাচ্যের কোন এক দেশে শ্রমিকের কাজ করে।সন্তান দু ‘টির ভাল লেখাপড়ার জন্যে পারভিন ভানু গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে ভাড়া বাসায় থাকে।গ্রামের বাড়িতে সহায়-সম্পদ তেমন কিছু নেইও।পারভিন ভানু শহরে এসে চাল-চলনে আভিজাত্যের ছোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।আগে পরত / পরতে হতো কম দামের সুতী শাড়ি।আর এখন শহুরে অাভিজাত্যের মিশেলে মধ্যবিত্তের প্রতীক হিসেবে পাকিস্তানী কিংবা ইন্ডিয়ার জর্জেট কাপড়ের থ্রি পিছ পরিধান করে, করতে হচ্ছে।অর্থাৎ, পারভিন ভানু নিজেকে এখন পাক্কা মধ্যবিত্ত হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে।এদিকে -স্বামী সিকান্দর করোনার কারণে সৌদী আরবে বিক্রয়যোগ্য শ্রম সহ নিজেই লকড্ ডাউন।সিকান্দর নিজেই খেতে পারছেনা, টাকা পাঠানো তো দূরের কথা।দেশে গায়ে মধ্যবিত্তের লেভেল লাগানো পারভিন ভানু কি ত্রাণের জন্যে আর দশজনের সাথে লাইনে দাঁড়াতে পারে?! তাছাড়া – ত্রাণ চোরেরা সঠিকভাবে ত্রাণ দিবে কি না কে জানে! সর্বোপরি – কথিত মধ্যবিত্ত পারভিন ভানুকে যদি চেয়ারম্যানের লোকেরা গলাধাক্কা দিয়ে তাড়িৃযে দেয়, ছবি তুলে যদি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়, কিংবা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয় – তাহলে স্বামী সিকান্দর ও দুই সন্তান ব্যাপারটাকে কীভাবে নিবে- এই চিন্তায় পারভিন ভানু আর ত্রাণের জন্যে লাইনে দাঁড়াতে সাহস পায়নি।সর্বনাশা করোনা হয়তোবা আজগর আলীদের মত করুণ পরিণতি নিয়ে পারভিন ভানুর জন্যে অপেক্ষা করছে!

কাহিনী-০৩. কিতাব আলী মোল্লা শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীর হিস্যা আদায় করে বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছে।ছেলের কয়েক বছরের আয়-রোজগারের টাকা একত্রিত করে কিতাব আলী গ্রামের বাড়িতে শণ এর ঘরের স্হলে একটি বিল্ডিং তৈরী করেছে।কিতাব আলী ‘র জমি-জিরাত নেই বললে-ই চলে।কিতাব আলী’র পোষাক-পরিচ্ছদে ইতোমধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।বিল্ডিং এর মালিক হওয়ার সুবাদে কিতাব আলীকে অনেকেই সমীহ করে চলে।গ্রামের সালিশ-দরবারেও ইদানিং কিতাব আলী ‘র ডাক পড়ে।
করোনার কারণে ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে পাছেনা বিধায় কিতাব আলী ‘র সংসারে চাল-চুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।কিন্তু ‘বিল্ডিং ‘নামক মধ্যবিত্তের প্রতীকি চিহ্ন গায়ে এঁটে ফেলার কারণে কিতাব আলী না পারে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে, না পারে কারো কাছে ত্রাণ চাইতে/ ত্রাণের জন্য বলতে।এমন কত শত কিতাব আলীদের অস্ফুট ক্রন্দন যে করোনার বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে সে হিসাব কে রাখে?!
কাহিনী-০৪. তথাকথিত ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে শমশের সাহেব চাকরি থেকে অবসরে গেছেন ক ‘দিন হলো।১ম শ্রেণীর একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির সুবাদে শমশের সাহেবের পরিচিতি, আত্মীয়তা মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্তের সাথে হওয়াটা-ই স্বাভাবিক।সামাজিক মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে শমশের সাহেব পরিবার নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে-ই বড় শহরের অভিজাত এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।মধ্যবিত্ত আর উচ্চ-মধ্যবিত্তের মিশ্রিত পরিচিতি ও মর্যাদাবোধকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে শমশের সাহেব আনুতোষিকের অর্ধেক টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনেছেন।উদ্দেশ্য এই- গাড়িটি পারিবারিক বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করা গেল এবং ড্রাইভার রেখে ওবার এ চালিয়ে বাসা ভাড়াটারও একটা বিহিত হলো।সর্বোপরি- অভিজাত এলাকায় বসবাস করার উপযুক্ততাও প্রমাণিত হলো।কিন্তু হায়! বিধি বাম! এ করোনাকালে ওবার বন্ধ থাকার কারণে শমশের সাহেব তো বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেননা।বাড়িওয়ালা তো ভাড়ার জন্য শমশের সাহেবের পিছু ছাড়ছেনা।’মধ্যবিত্ত ‘শমশের সাহেবের এখন কী উপায়?!

কাহিনী-০৫. হক সাহেবের বস মন্ডল সাহেব অবসরে গেছেন এই তো সেদিন।চাকরিতে থাকাকালীন প্রচুর দুই নম্বরি আয়ে ওপারে জমি কিনেছেন।দুই নম্বরি টাকা আর আনুতোষিক এর টাকা মিলিয়ে এপারে গোপীবাগে আর মোহাম্মদপুরে দুইটি ফ্লাট কিনেছেন।একটিতে নিজে থাকেন, অপরটি ভাড়া দিয়েছেন।হাতে এখন কোন টাকা-পয়সা নেই।ফ্লাটবাড়ির ভাড়ার টাকায় সংসার চালানোর ব্যবস্হাপনার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো করোনা।কেননা- ভাড়াটিয়া তো ভাড়া দিচ্ছেনা/ দিতে পারছেনা।এর কারণটাও যৌক্তিক। ওদিকে করোনার কারণে ভাড়াটিয়ার আয়ের উৎসও হয়তোবা বন্ধ।অর্থাৎ, এ সময়ে মন্ডল সাহেবকেও কাতরকন্ঠে বলতে শোনা যায়- ‘বড়ই অসহায় হয়ে গেলাম।একদম মধ্যবিত্তের চেয়েও অধম’!

চাকরিজীবনে দাপুটে-ঘুষখোর মন্ডলরাও চাকরিজীবন শেষে মধ্যবিত্তের খাতায় নাম লিখায়।যে মন্ডলের অপরের জন্যে হাত বাড়ানোর কোন ইতিহাস নেই,আছে অপরের হাত থেকে কেড়ে নেয়ার অনেক নিকৃষ্ট উদাহরণ।সেই মন্ডল-ই করোনার কাছে হয়ে পড়ে উপায়হীন, অসহায়।তিনিও এখন অপরের কাছে হাত পাততে উদ্যোগী হন, কিন্তু পারেননা।কারণ-তিনি যে এখন ‘মধ্যবিত্ত ‘সেজেছেন!

হ্যাঁ, শুধু করোনাকাল কেন? এ-রকম হাজারো মধ্যবিত্ত আজগর, পারভিন, কিতাব আলী আর শমশেররা নিজেরা-ই তাঁদের জীবনের করুণ কাহিনী নীরবে, নিভৃতে চোখের জলে লিখে যায় প্রতিনিয়ত।এ কান্না কেউ দেখেনা, তাঁরাও কাউকে-ই দেখাতে চায়না কারণ – তাঁরা যে ‘মধ্যবিত্ত ‘।

আর- ‘মন্ডল ‘ নামীয় শুধুমাত্র করোনাকালের লোকদেখানো মধ্যবিত্তরা অনেককেই কাঁদিয়েছে।তবে হ্যা- তাঁদেরকেও কাঁদতে হবে আজীবন।আর – সেই কান্না হবে আজগর আলী, পারভিনদের মত অদৃশ্য নহে, হবে অস্ফুট, তবে-দৃশ্যমান।

লেখক:: মো. নুরুল হক, অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল বাংলাদেশ ডাক বিভাগ


শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১