হাবিবুর রাহমান:: রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস। আল্লাহ তাআ’লার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের এটাই সুবর্ণ সুযোগ। দেহের সঙ্গে পোশাকের যেমন নিবীড় সম্পর্ক, রমজানের সঙ্গে কুরআনের সর্ম্পকটা তেমনি গভীর।
মহান আল্লাহ বলেন,
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ
রমজান হলো এমন একটি মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াত এবং পথ চলার নির্দেশিকা ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ। (বাকারা-২ আয়াত : আয়াত-১৮৫)
★ পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াতের সাওয়াব অনেক। রমজানে তিলাওয়াতের মাধ্যমে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। কুরআন ও রমজান বান্দার জন্য আল্লাহ দরবারে সুপারিশ করবে।
হাদিস শরীফে এসেছে,
الصِّيامُ والقرآنُ يشفَعانِ للعبدِ يومَ القيامةِ يقولُ الصِّيامُ أي ربِّ منعتُهُ الطَّعامَ والشَّهواتِ بالنَّهارِ فشفِّعني فيهِ ويقولُ القرآنُ منعتُهُ النَّومَ باللَّيلِ فشفِّعني فيهِ قالَ فَيشفَّعانِ
রমজান এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! সারাদিন আমি তাকে খাবার এবং বৈধ উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করে নাও। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। রাতের ঘুম ছেড়ে দিয়ে সে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদে আমায় তিলাওয়াত করেছে। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ তুমি কবুল করে নাও।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজা এবং কুরআনের সুপারিশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করে নিয়ে বান্দাকে মাগফিরাত এবং ক্ষমার পুরস্কারে ভূষিত করবেন। (মুসনাদে আহমাদ ও মিশকাত)
প্রতিটি মুসলমানের জন্য উচিত হলো এ মাসে কুরআনে পাকের সঙ্গে সর্বাধিক সম্পর্ক রাখা। বেশি বেশি খতমে কুরআন দেয়া। রমজান মাসে অধিক পরিমাণ কুরআন তেলাওয়াত করা এবং কুরআন খতম করতে সচেষ্ট থাকা মুস্তাহাব। তবে সেটা ফরজ নয়। খতম করতে না পারলে গুনাহ হবে না। তবে অনেক সওয়াব থেকে সে ব্যক্তি বঞ্ছিত হবেন।
এর দলিল হচ্ছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইমাম বুখারি (৪৬১৪) বর্ণিত হাদিস: “জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লামের নিকট প্রতিবছর একবার কুরআন পাঠ পেশ করতেন। আর যে বছর তিনি মারা যান সে বছর দুইবার পেশ করেন।”
ইবনে কাছির (রহঃ) ‘আল-জামে ফি গারিবিল হাদিস’ গ্রন্থে (৪/৬৪) বলেন:অর্থাৎ তিনি তাঁকে যতটুকু কুরআন নাযিল হয়েছে ততটুকু পাঠ করে শুনাতেন।
★★পবিত্র রমজানে সালাফের খতমে কুরআনঃ
√ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে সলফে সালেহিনের আদর্শ ছিল রমজান মাসে কুরআন খতম করা। ইব্রাহিম নাখায়ি বলেন: আসওয়াদ রমজানের প্রতি দুই রাত্রিতে একবার কুরআন খতম করতেন।[আস- সিয়ার, (৪/৫১)]
√ কাতাদা (রহঃ) সাতদিনে একবার কুরআন খতম করতেন। রমজান মাস এলে প্রতি তিনদিনে একবার কুরআন খতম করতেন। শেষ দশ রাত্রি শুরু হলে প্রতি রাতে একবার কুরআন খতম করতেন।[আস সিয়ার, (৫/২৭৬)]
√ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রমজানের প্রতি রাত্রিতে কুরআন খতম করতেন।[নববির ‘আত তিবয়ান (পৃষ্ঠা-৭৪)] তিনি বলেন: উক্তিটির সনদ সহিহ।
√ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আলী আল-আযদি রমজানের প্রতি রাত্রিতে একবার কুরআন খতম করতেন।[তাহযিবুল কামাল (২/৯৮৩)]
√ রবী’ বিন সুলাইমান বলেন: শাফেয়ী রমজান মাসে ষাটবার কুরআন খতম করতেন।[আস সিয়ার (১০/৩৬)
√ ইমাম আবু হানিফা রহ. এর কথা প্রসিদ্ধ আছে তিনি রমজান মাসে ৬১ খতম তিলাওয়াত করতেন।
√আল্লামা কাসিম নানুতুবী রহ. ১২৭৭ হিজরীতে মক্কা-মদীনা সফর কালে রমজান মাসে কুরআন পাক মুখস্ত করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি বেশেী বেশী তিলাওয়াত করতেন। একবার তিনি এক রাকাতে সাতাশ পারা তিলাওয়াত করেছিলেন।
√ হাজী এমদাদুল্লাহ মক্কী রহ. সারা রাত বিভিন্ন হাফেজদের থেকে পালাক্রমে নামাজে তিলাওয়াত শুনতেন।
√হযরত শাহ আবদুর রহীম রায়পুরী রহ. হাফেজে কুরআন ছিলেন। প্রায় সারা রাত কুরআন তিলাওয়াত করতেন। চব্বিশ ঘন্টায় তিনি শুধু এক ঘন্টা ঘুমাতেন। √শায়খুল হিন্দ মাহমূদুল হাসান দেওবন্দী রহ. হাফেজ ডেকে নামাজে সারা রাত কুরআন শরীফ শুনতেন। তারাববীতে কখনও ছয় পারা, কখনও দশ পারা পড়া হতো।
√ শায়খুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. আসরের পর দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষক হাফেজ-মাওলানা আবদুল জলিল রহ. এর সঙ্গে শোয়া পারা দাওর করতেন অর্থাত পরষ্পর শোনাতেন।
√ হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া রহ. রমজান মাসে দৈনিক চল্লিশ পারা তিলাাওয়াত করতেন।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি কুরআন পড়ার তাওফিক দেন।আমিন।