আজ সোমবার, ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি, ভোর ৫:১৫

নবীজীর ইফতার ও সাহরী

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত এপ্রিল ২৭, ২০২০, ০২:৩১ অপরাহ্ণ
নবীজীর ইফতার ও সাহরী

লুকমান হাকিম:: আজ ৩রা রামাযান, সোমবার-১৪৪১ হিজরি। রহমত দশকের তৃতীয় দিন আজ। গতকাল আমরা রোজার লাভ সম্পর্কে আলোকপাত করেছি। আজ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইফতার ও সেহরি কেমন ছিল সে সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোচনা করবো।-ইনশাআল্লাহ

আমরা রাসূল সা. হৃদয় থেকে মহব্বত করি। প্রত্যেক বিষয়ে তাকে অনুসরণ করতে আমরা আদিষ্ট। জান্নাতে আমরা তাঁর সাথে থাকতে হলে তাকে যথাযথ অনুসরণ করতেই হবে। রাসূল সা. রামাযান কীভাবে কাটাতেন? সাহরী-ইফতার কী দিয়ে করতেন?

রাসূল সা. রামাযানকে গুরুত্বসহকারে স্বাগত জানাতেন। রামাযানের গুরুত্ব সম্পর্কে পরিবার ও সাহাবাদেরকে সচেতন করতেন। রামাযানকে গুরুত্ব দিতে, দিন-রাত, মুহূর্ত কাজে লাগাতে সবাইকে উৎসাহিত করতেন। বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি না করতে সতর্ক করতেন। বলতেন,
ﺇﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺸﻬﺮ ﻗﺪ ﺣﻀﺮﻛﻢ، ﻭﻓﻴﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻟﻒ ﺷﻬﺮ، ﻣﻦ ﺣُﺮﻣﻬﺎ ﻓﻘﺪ ﺣُﺮﻡ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻛﻠﻪ، ﻭﻻ ﻳُﺤﺮﻡ ﺧﻴﺮﻫﺎ ﺇﻻ ﻣﺤﺮﻭﻡ‏.
রামাযান মাস তোমাদের সামনে এসেছে। এতে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রাত রয়েছে। এই রাতের বরকত থেকে যে বঞ্চিত, সে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। আর কপালপোড়া ছাড়া এ রাতের বরকত থেকে কেহ বঞ্চিত হয় না। (ইবনু মাজাহ)

রাসূল আরো বলতেন, রামাযানের প্রথম রাতে শয়তান-জিন্নাতকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়। একজন ঘোষক ঘোষণা দেন, হে কল্যাণের সন্ধানী, অগ্রসর হও। হে পাপিষ্ট, থেমে যাও। প্রত্যেক রাতে জাহান্নাম থেকে আল্লাহ অনেক মানুষকে মুক্তি দেন। (উবনু মাজাহ) হাদীসটি এভাবে এসেছে,
(ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﺃﻭﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺻﻔﺪﺕ ﺍﻟﺸﻴﺎﻃﻴﻦ ﻭﻣﺮﺩﺓ ﺍﻟﺠﻦ، ﻭﻏﻠﻘﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻓﻠﻢ ﻳُﻔﺘﺢ ﻣﻨﻬﺎ ﺑﺎﺏ، ﻭﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻠﻢ ﻳﻐﻠﻖ ﻣﻨﻬﺎ ﺑﺎﺏ، ﻭﻧﺎﺩﻯ ﻣﻨﺎﺩٍ : ﻳﺎ ﺑﺎﻏﻲ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﺃﻗﺒﻞ، ﻭﻳﺎ ﺑﺎﻏﻲ ﺍﻟﺸﺮ ﺃﻗﺼﺮ، ﻭﻟﻠﻪ ﻋﺘﻘﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻭﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ‏» – ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ)

আরও পড়ুন:  সিলেটে এবারও ঈদের জামাত হবে মসজিদে

রাসূল সা. প্রতিদিন রোযার নিয়ত করতেন। সাহরীর প্রতি তাঁর পরম আগ্রহ ছিল। দেরিতে সাহরী করতে সবাইকে তিনি উৎসাহিত করতেন। রাসূলের সাহরী ছিল ফজরের নিকটবর্তী। আযান ও সাহরীর মধ্যখানে সামান্য পরিমাণ পার্থক্য হত। ২০আয়াত সমপরিমাণ বা এর চেয়ে কম। তিনি কোনো বিবির সাথে সাহরী করতেন। অল্প খেতেন। অনেক সময় কয়েকটি খেজুর, সাথে সামান্য খাবার খেতেন ও পানি পান করে সাহরী খেতেন। অনেক সময় সাহাবাদের সাথে সাহরী খেতেন। বুখারী শরীফে এসেছে, তিনি এবং যায়দ বিন হারেসা রা. সাহরী খেয়েছেন। রাসূল সা. বলেন,
ﺗﺴﺤﺮﻭﺍ ﻓﺈﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ ﺑﺮﻛﺔ.
সাহরী খাও, কেননা এতে বরকত রয়েছে। সাহরীর বরকত কী? সাহরী রোযাদারকে রোযাসহকারে আমল করতে শক্তি যোগায়। তা ছাড়া ইবাদাতের নিয়তে সাহরী বরকতময় হয়ে ওঠে। এ জন্যই রাসূল সা. বলেন,
ﺍﺳﺘﻌﻴﻨﻮﺍ ﺑﻄﻌﺎﻡ ﺍﻟﺴﺤﺮ ‏(ﺃﻯ ﻭﻗﺖ ﺍﻟﺴﺤﺮ) ﻋﻠﻰ ﺻﻴﺎﻡ ﺍﻟﻨﻬﺎﺭ، ﻭﺑﺎﻟﻘﻴﻠﻮﻟﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻠﻴﻞ.
দিনে রোযা রাখতে সাহরী খেয়ে সাহায্য নাও আর রাতে কিয়াম করতে দুপুরে বিশ্রাম করে শক্তি নাও। সাহরী এই উম্মতের বৈশিষ্ট্য। অতীতের সম্প্রদায় রোযা রাখতো কিন্তু সাহরী খেতো না। ঘুমের পর তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। আমর ইবনু আস রা. বলেন,
ﻓﺼﻞ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺻﻴﺎﻣﻨﺎ ﻭﺻﻴﺎﻡ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ، ﺃﻛﻠﺔ ﺍﻟﺴﺤﺮ.
আহলে কিতাব ও আমাদের রোযার পরস্পরে পার্থক্য হলো, সাহরী।
নবীজী কয়েক লুকমা খাবার খেয়ে সাহরী করতেন। খেজুর ছিল দৈনিক নির্ধারিত সাহরী। এ ছাড়া যা- তা, অনির্ধারিত। রাসূল সা. খেজুর দিয়ে সাহরীর প্রশংসা করে বলেন, ﻧِﻌْﻢَ ﺳَﺤُﻮﺭُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺍﻟﺘَّﻤْﺮُ ‏ খেজুর দিয়ে মুমিনের সাহরী কতই না উত্তম। (আবু দাউদ)

সাহরী শেষে রাসূল সা. ঘরে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতেন। ফজরের আযান পর্যন্ত নামাজ পড়তেন। আযান হলে সুন্নাত পড়তেন। পরে জামাতের অপেক্ষা করতেন। বিলাল রা. ইকামত দিতে অনুমতি চাইতেন। তখন কামরা থেকে রাসূল বের হতেন। অতঃপর লোকদেরকে নিয়ে জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করতেন। সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে জিকর করতেন। পরে ইশরাক আদায় করতেন। ইশরাকের সওয়াব হজ-উমরার মত সওয়াব।

আরও পড়ুন:  পশ্চিম সোনারপাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল সম্পন্ন

সূর্যাস্তের পূর্বে বৈকালিন জিকর ও অন্যান্য দুআ করতে নবীজী বসতেন। মুআজ্জিন মাগরিবের আযান দিলে ইফতার নিয়ে আসতে চাইতেন। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত,
ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻃَﺒَﺎﺕٍ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺭُﻃَﺒَﺎﺕٌ، ﻓَﻌَﻠَﻰ ﺗَﻤَﺮَﺍﺕٍ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺣَﺴَﺎ ﺣَﺴَﻮَﺍﺕٍ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ. (الترمذي-أبو داود)
রাসূল সা. নামাযের পূর্বে টাটকা কয়েকটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। টাটকা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দিয়ে; তাও না থাকলে, কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করতেন। (তিরমিযী ও আবু দাউদ)

দ্রুত ইফতার করতে রাসুল সা. উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূল সা. বলেন,
ﻻ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻋَﺠَّﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮَ.
যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা দ্রুত ইফতার করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কল্যাণে থাকবে। (বুখারী-মুসলিম)
কেননা, ইয়াহুদ-নাসারারা ইফতার দেরিতে করে।
(আবু-দাউদ)
রাসূল বলেন, তোমাদের কেহ ইফতার করতে চাইলে সে যেনো খেজুর দিয়ে করে। কারণ এতে বরকত রয়েছে। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কারণ তা পবিত্র করে। পরে রাসূল সা. মসজিদে চলে যেতেন। জামাতে নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর ঘরে এসে তৃপ্তিসহকারে ইফতার করতেন।

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১