আজ শুক্রবার, ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি, বিকাল ৪:৫৭

করোনাকালের ভাবনা

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত এপ্রিল ১৪, ২০২০, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ
করোনাকালের ভাবনা

মো. নুরুল হক, অতিথি লেখক:: বর্তমান সারাবিশ্বকে নাড়া দেয়া এক মহামারীর নাম করোনা ভাইরাস। যা নিয়ে গোটা বিশ্বজুড়ে চলছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা। 

 
মহামারি ‘করোনা ‘র এ বিস্তৃতিকালে মানুষের ভাবনারও চরম বিস্তৃতি ঘটছে, ভাবনাভেদে এর রকমফেরেও চরম উন্নতি/ অবনতি/উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে!

চুরির ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের স্মারকধারী ত্রাণচোরেরা ভাবছে- ‘আমাদের নিজেদের/ বাবাদের ঐতিহ্যগত ব্যবসাটাকে পূনর্জন্ম দানকরার জন্যে এ করোনাকালটা-ই উত্তম সময় ‘।
সবসময় তো আর এমন সুযোগ আসেনা/ আসবেনা।সেই কবে ৭৪-৭৫ সালে একবার এ সুযোগ এসেছিল।আর এবার ২০২০ সালে করোনাকালে তাঁরা এমন সুযোগ পেল, যদিও তাঁরা এরই মধ্যে অনেক পুকুর- চুরি ‘র ঘটনাও ঘটিয়েছে।
এ করোনাকালে চাল/ ত্রাণ চোরদের মাথায় চুরির মাল গোপণ করে রাখার অভিনব সব ভাবনার উদ্ভব ঘটিয়ে নিজের ঘরের মেঝেতে গর্ত খুঁড়ে সেখানটায় ত্রাণের চাল লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতেও কিন্তু কার্পণ্য করেনি।

এ করোনাকালে কারো-কারো ভাবনায় নিজ চেতনার উগ্র বহিঃপ্রকাশও অত্যন্ত প্রকট ও নিকৃষ্টতমভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে।
এক চেতনাধারী আরেক চেতনাধারীর পা কেটে উল্লাসনৃত্য সমেত মিছিল করে ‘জয় বাংলা ‘শ্লোগানের বারটা বাজিয়ে ছাড়ছে!

আরেকদল নব্য চেতনাধারী ভাবছে- নিজের মরিচাপড়া চেতনাটাকে ঝালাই করে নেয়ার এখন-ই সময়।তাই তারা মৃতের কবরকে ঝাড়ুপেটা করে উল্লাস প্রকাশের মাধ্যমে কারো-কারো সু- নজরে আসার চেষ্টা করছে।

করোনাকালের এ অখন্ড অবসর সময়( যদিও দুঃসময়) কে কেউ-কেউ এমনিতে বসে- বসে পার করতে চাইছেনা, ভাবছে কী করা যায়।পূর্শত্রুতার জেরটাকে টেনে আনার এখনই মোক্ষম সময়।বাঁধিয়ে দিল ঝগড়া।কমপক্ষে ২০ জন আহত না হলে এ ঝগড়ার মূল্যটা রইল কই?!

এ করোনাকালের অবসরে দিঘিতে মাছ ধরার উৎসবটা সেরে নিলে কেমন হয়? যেমন ভাবনা তেমন কাজ।দিঘিতে মাছ ধরার উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে কে কত নিকৃষ্টতম উগ্রতার প্রকাশ ঘটাতে পারে তারও একটা প্রদর্শনী হয়ে যাকনা!
করোনাকালে বাথরুম সিঙ্গাররা ভাবছে- ‘ বাথরুমে গান গেয়ে নিজের এত্ত বড় প্রতিভাকে আর কত লুকিয়ে রাখব।
এবার বাথরুম থেকে বেরিয়ে বাস্তায় বসে গান গেয়ে আমরা কেন আমাদের শৈল্পিক প্রতিভার প্রকাশ ঘটাই না। ভাবনার সুন্দরতম (?) প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত।৬০ জন আহত হবার মধ্য দিয়ে এ সুন্দরতম ভাবনার সফল পরিণতি!

আরও পড়ুন:  ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব

এ করোনাকালে গ্রাম্য টাউট-বাটপার-মাতবরদেরও সময় কাটতে চায়না।গ্রামে একে-অপরের মধ্যে ঝগড়া বাঁধানোর কুটকৌশলের চর্চাটা বন্ধ রাখা যায় আর কত দিন? তারা ভাবছে- এ সুযোগে গ্রামে একটা ঝগড়া বাঁধিয়ে মিমাংসার নামে টু-পাইস কামিয়ে নিতে পারলে তো মন্দ হয়না।ভাবনা অনুুযায়ী-ই কাজ।বাঁধানো হলো ঝগড়া। আহত ৭০।এবার দুই পক্ষ থেকেই কিছু মাল পকেটস্হ করার একটা উপায় তো হলো!

করোনাকালের এ লকডাউনে বসে কীভাবে এলাকার ময়লা পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্হা করা সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে।সিদ্ধান্ত হলো- ড্রেন নির্মান করতে হবে।ভাবনা এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রেন নির্মানকে কেন্দ্র করে লকডাউন ভেঙ্গে প্রচন্ড সংঘর্ষ, আহত শতাধিক।বাহ! করোনাকালের মহৎ(?) ভাবনার সে কী করুণ পরিসমাপ্তি!

এ করোনাকালে অটোরিক্সাচালকটা ভাবছে-‘ইতোমধ্যে তো আমার নাম মধ্যবিত্তের খাতায় লিখা হয়ে গেছে। তাই, এ দূর্যোগকালে আমিই সবচেয়ে অপাঙতেয় ব্যক্তি , অন্যান্যদের মত ত্রাণের জন্য হাত পাততেও পারছিনা, আমার কেউ খোঁজও নিচ্ছেনা। অটোরিক্সাটা নিয়ে-ই বের হইনা কেন্?’
ভাবনা মোতাবেক বের হলে প্রথমেই তাঁকে লকডাউন ভাঙ্গার কারণে লাঠিপেটা খেতে হলো।এখান থেকে কোন রকমে পার পেয়ে একজন তথাকথিত ভদ্র যাত্রি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া বেশি( যাত্রির ভাষ্যমতে) চাওয়ায় বেঁধে গেল সংঘর্ষ।। আহত ২০।কথিত মধ্যবিত্ত অটোরিক্সাচালকের ভাবনার কী করুণ পরিণতি!

এ করোনাকালে গোষ্ঠির প্রধানগন ভাবছেন- ‘কী করোনা আইল রে ভাই, এ তো দেখছি আমাদের প্রাধান্যে ভাগ বসিয়ে দিচ্ছে! ঠুনকো অজুহাতে চৌধুরীর গোষ্ঠি আর মিয়ার গোষ্ঠিতে বাঁধানো হলো ঝগড়া।খুনোখুনি, নিহত ১।
আজকাল তথাকথিত গোষ্ঠিপ্রধানদের ভাবনা এমন-ই হয়ে থাকে!

করোনাকালে কৃষি-সেচ প্রকল্পের কাজ তো আর বন্ধ রাখা যায়না।সংশ্লিষ্ট পক্ষ সমূহের ভাবনা এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পানি নিয়ে দরকষাকষি করতে যেয়ে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। পুলিশ সহ আহত ২৫।এ-সময়ের ভাবনাগুলোর এ কেমন রূপ!

এদিকে, এ করোনাকালে কোন কোন পাতি-নেতা, ছাতি-নেতারা ভাবছে- ‘চুরি করা ত্রাণের চাউল বিতরণের ক ‘টা ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে উপরের সারির নেতাদের নযরে এনে পদ বাগিয়ে নেয়ার ভবিষ্যতের পথ প্রশস্হ করছিনা কেন ‘!যেমন ভাবনা তেমন কাজটা সেরে নিতেও তাদের যেন আর তর সইছেনা।শুরু হয়ে গেছে ত্রাণ বিতরণে ফটোসেশানের প্রতিযোগীতা।আবার কেউ-কেউ ত্রাণ বিতরণ করে কেড়েও নিয়েছে- এ সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে।পাতি-ছাতি নেতা/ জনপ্রতিনিধিদের ভাবনার সে- কী বিশ্রী রূপ!

আরও পড়ুন:  মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মনীন্দ্রচন্দ্র রায় এর অবদান

এ করোনাকালে কোন কোন ডাক্তার ভাবছেন- ‘হাসপাতালে ডিউটি করতে যেয়ে নিজেও মরব এবং পরিবারকেও মারতে যাব কেন্ ‘। ভাবখানা এমন- যেন তাঁর মৃত্যু কখন , কীভাবে হবে – এ সার্টিফিকেট যেন তাঁর নিজের হাতেই আছে।এ করোনাকালে ডাক্তারদের এ কোন্ অমানবিক- দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবনা!?

এ করোনাকালে সবারই ভাবনা হওয়া উচিৎ- স্ব স্ব অবস্হানে থেকে অর্পিত দায়িত্ব(করোনা-চিকিৎসাকাজে নিয়োজিতদের)মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে পালণ করা ,সবাইকে স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা মোকাবেলা করা।

আর- ত্রাণ চোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ত্বরিৎ নিশ্চিৎ করা।

লেখক:: মো. নুরুল হক, অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল বাংলাদেশ ডাক বিভাগ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০