আজ মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, রাত ২:৩৪

করোনা প্রতিরোধে চাই ইবাদতে মনোনিবেশ

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত মার্চ ২৬, ২০২০, ০১:১৭ অপরাহ্ণ
করোনা প্রতিরোধে চাই ইবাদতে মনোনিবেশ

মিজানুর রহমান মামুন:: মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস বিশ্বজুুড়ে এক মহামারী আকার ধারণ করেছে।

যার প্রভাব ব্যাপকভাবে বাংলাদেশেও পড়েছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি গুজব, অপপ্রচার বা ‘ভূয়া সংবাদ’ ছড়ানো হচ্ছে।

ফেসবুকে কেউ কেউ আবার বলছেন, ‘করোনা আল্লাহর গজব।’ চীন, ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ নাকি পাপী তাই তাদের ওপর ‘আল্লাহর গজব’ পড়েছে। কিন্তু এই ‘গজব’ যে বাংলাদেশের ওপরও ব্যাপকহারে পড়ছে তা কি ভেবে দেখেছি আমরা? বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের হার দিনদিন বাড়ছে। ইতিমধ্যে দেশে পাঁচ জন মারাও গেছেন। আসলে প্রত্যেকটা মহামারিই ‘আল্লাহর গজব।’ এই ‘গজব’ যেকোনো দেশের ওপর, যেকোনো ব্যক্তির ওপর যেকোনো সময় পড়তে পারে। এই তো কিছুদিন আগে আমাদের দেশে ডেঙ্গুজ্বরে অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছেন। তবে এই ‘গজব’ কেবল বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও পড়েনি!
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৩৬৭ জন,সংক্রমিত হয়েছেন ৪ লাখ ২৩ হাজার মানুষ।দেশে করোনাভাইরাসে পাঁচজন মারা গিয়েছে এবং ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন।এই মহামারী ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।দেশের সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ,গণপরিবহন ব্যবস্থা সীমিতকরণ,ফার্মেসী,কাঁচা বাজার,মুদির দোকান ব্যতীত সব দোকানপাট বন্ধ,বিভিন্ন দেশের সাথে বিমান ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ,কোথায়ও লোকসমাগম না হওয়া,সবধরনের মিটিং-মিছিল,ওয়াজ মাহফিল,সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ, জনসাধারণ ঘরের বাহিরে বের না হওয়ার নির্দেশ প্রদান এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং অধিকাংশ শহরগুলোতে লকডাউন করা হয়েছে।প্রত্যক এলাকায় প্রবাসীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক সহযোগিতার আহবান করা হয়েছে।প্রবাসীদের ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা ব্যক্তি এই ১৪ দিনের মধ্যে ঘরের বাহিরে যেতে পারবেনা এবং সে আলাদা রুমে থাকবে,
পরিবারের কারো সংস্পর্শে আসতে পারবে না।
দয়া করে প্রবাসীরা এই ১৪ দিনকে এতেকাফের নিয়তে নিজ ঘরের নির্দিষ্ট একটি রুমে অবস্থান করুন।এবং দেশবাসী মুসলমান সম্প্রদায়ের জনসাধারণরা এতেকাফ মনে করে নিজগৃহে আলাদা আলাদা থেকে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করার অনুরোধ ঞ্জাপন করছি।
এই নাজুক পরিস্থিতিতে মানুষকে আর আতঙ্কিত না করে, মানুষকে গজব গজব বলে ভয় না দেখিয়ে,আলতু ফালতু লিখা পোস্ট না করে আল্লাহবিমুখী মানুষগুলোকে আল্লাহমুখী করতে উদ্বুদ্ধ করবার চেষ্টা করি। এই মুহুর্তে এটা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী।
সরকার/প্রশাসন,ডাক্তাররা যেভাবে দেশ ও জাতির জন্য তারা তাদের সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন এটা সত্যি প্রশংসনীয়।
এখন নিজেকে বাঁচানোর সময় এবং অন্যকে বাঁচানোর জন্য নিজ থেকে চেষ্টা করা নৈতিক দায়িত্ব।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নিজেকে একটু গুজব নিয়ন্ত্রণ করে দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য কিছু করি। নিজের ক্ষমতার জন্য দালালী,গোলামী বাদ দিয়ে আমরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদে লিপ্ত হয়ে পড়ি। মানুষকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করি যে, নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচার জন্য সহযোগিতা করুন ।আমাদের ঈমানের শক্তির চেয়ে করোনার শক্তি বেশি নয়।তবে এটা সত্য এটা আমাদের গুনাহের ফসল আল্লাহ দেওয়া আমাদের জন্য আজাব এবং গজব।

আরও পড়ুন:  দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত

মনে রাখবেন! যার ঈমান যত বেশী শক্তিশালী তার অন্তরে করোনার ভয় তত কম হবে। আর যার ঈমান যত কম তার অন্তরে করোনার ভয় তত বেশী হবে।সুতরাং ভয় না পেয়ে,আতংকিত না হয়ে আমাদের ঈমানকে আমরা আরো শক্তিশালী করি। আমরা সবাই আল্লাহ মুখি হই আমাদের আমলগুলোকে আমরা আরো বেশী পরিশুদ্ধ করি। অন্তত এই ক্লান্তিলগ্নে স্ট্যাটাসমুখী না হয়ে বাস্তবমুখী হওয়ার চেষ্টা করুন সবাই মিলে।ফেইসবুকে একটা আবেগময় স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম,আর আমীন,আমীন,আল্লাহ হেফাজত করুন লিখতে লিখতে সময় শেষ করে ফেললাম। এটায় কোন কাজ হবেনা খোদার কসম এর দ্বারা এক পয়সার ও কোন কাজ হবে না, যতক্ষণ না আপনি/আমি বাস্তবমুখী না হবো।

কোনো কিছু ঘটলেই সেটা থেকে নিজেরা কিভাবে ফায়দা লোটা যায়, সে ধান্দায় ব্যস্ত আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা৷ বাংলাদেশে হঠাৎ মাস্কের দাম বেড়ে গেছে, কিন্তু এই মাস্ক দিয়ে ভাইরাস কতটা প্রতিরোধ করা যায় সেটা আমার বোধগম্য নয়। যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেক্ষেত্রে মাস্ক কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে সেটা বোধগম্য নয়। শুধু মাস্ক নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিচ্ছেন গুজব ছড়িয়ে।

তাই আসুন! আমরা প্রত্যেকের অবস্থান থেকে বেশী বেশী নেক আমল করার চেষ্টা করি। ঘরে বসে বসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোরআনের তেলাওয়াত এবং তাসবীহ/তাহলীল বেশী বেশী করি। ইনশাআল্লাহ দেখবেন সব পূর্বের মত ঠিক হয়ে গেছে।আল্লাহ অসীম দয়ালু এবং দয়ার ভান্ডার।ইনশাআল্লাহ্‌ আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করবেন।

গুজব না ছড়িয়ে, ভয় না ছড়িয়ে, আসুন চিকিৎসকদের কথা শুনি৷ কী কী সাবধানতা অবলম্বন করলে শুধু করোনা নয়, যেকোনো রোগের সঙ্গে লড়াই করে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা যাবে, সেদিকে লক্ষ্য দেই৷সচেতন থাকলে করোনা আক্রমণ করতে পারবে না। চিকিৎসায় করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ায় যায়। করোনা নিয়ে এত আতংকিত না হয়ে সচেতন হোন, শান্ত থাকুন৷ গুজবে কান দিয়ে, বিদ্বেষ ছড়িয়ে আসুন কোমল হৃদয়ে আর চাপ না বাড়াই। সবাই সুস্থ থাকুন। নিরাপদে থাকুন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন থাকুন। দেশবাসী ও প্রবাসী সবাইকে মহান আল্লাহ তায়ালা যেন হেফাজত করেন, আমীন।

আরও পড়ুন:  সিলেটে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত, লকডাউন বাসা

লেখক: তরুণ আলেম, সংগঠক

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১