সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: মরণ ব্যধি করোনার বিষ ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। যেখানে মুক্ত, কোলাহল পরিবেশে অবস্থানকারীরা করোনাভাইরাস এ আতঙ্কিত সেখানে বন্দী জীবনযাপনকারীদের কী অবস্থা হবে?
কারাগারে প্রতিটি ওয়ার্ডে একসাথে অনেক বন্দি থাকেন। ফলে কোনোভাবে কারা অভ্যন্তরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে বন্দিদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।
এ প্রেক্ষিতে কারা অধিদফতর সিলেটসহ দেশের ৬৮টি কারাগারে বিশেষ বার্তায় কিছু দিকনির্দেশনা পাঠিয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুসারেই কাজ করছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারা কর্র্তৃপক্ষ।
কারাগারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল।
জানা গেছে, সিলেট শহরতলির বাদাঘাটস্থ বাধ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর বন্দি ধারণক্ষমতা তিন হাজার ২১০ জন। তবে শনিবার (২১ মার্চ) পর্যন্ত এ কারাগারে ছিলেন দুই হাজার ৭৪০ জন বন্দি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্দিদের কেউ যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন, সেজন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে কারাগারে যাওয়া নতুন বন্দিদের কারাগারের প্রবেশমুখেই স্যানিটাইজার দিয়ে হাত-মুখ ধোয়ানো হচ্ছে। এরপর নতুন বন্দিকে পুরনো বন্দিদের থেকে একটি পৃথক ভবনে (আমদানি ভবন) আগমনি ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে এক রাত। এ ভবনে ওয়ার্ড আছে ১২টি। সেখানে তার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। পর দিন তাকে আরেক দফা চেকআপ করে নতুন একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাকে রাখা হচ্ছে ১৩ দিন।
তবে কারাগারে থার্মাল স্ক্যানার (জ্বর পরিমাপের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র) নেই বলে জানা গেছে। বর্তমানে সাধারণ থার্মোমিটার দিয়েই জ্বর পরিমাপ করা হচ্ছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘এটা অনেকটা কোয়ারেন্টিনের মতো ব্যবস্থা। কোয়ারেন্টিনের এ সময়ের মধ্যে যদি কোনো বন্দির মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়, তবে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাকে নিয়ে যাওয়া হবে কারাগারে করা আইসোলেশন ওয়ার্ডে। ফলে তার মাধ্যমে অন্য বন্দিদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা থাকবে না।’
তিনি জানান, থার্মাল স্ক্যানারের জন্য কারা অধিদফতরকে বলা হয়েছে। শিগগিরই এটা পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে, কারাগারের কর্মকর্তা, পাহারাদারসহ অন্যান্যদের জন্যও নেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। সবাইকে মাস্ক প্রদান করা হয়েছে। কারাগারে ঢুকতে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত-মুখ ধুতে হচ্ছে। এছাড়া বাইরে থেকে প্রবেশ করার সময় জীবাণুনাশকযুক্ত পানির মধ্য দিয়ে তাদেরকে হেঁটে যেতে হয়। কারো জুতার মাধ্যমে যাতে ভাইরাস কারা অভ্যন্তরে ঢুকতে না পারে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, কারাগারে দর্শনার্থীদের বিষয়েও কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারাগারে থাকা কোনো বন্দির সাথে তার স্বজনরা দেখা করতে গেলে শুরুতেই ‘ওয়েটিং জোনে’ সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত-মুখ ধুতে হচ্ছে। বন্দিদের সাথে তাদের দেখা করার ক্ষেত্রে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘আগে বিভিন্ন বিচারাধীন মামলার বন্দিদের সাথে তার স্বজনরা ৭ দিনে একবার দেখা করার সুযোগ পেত। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সতর্কতা হিসেবে এটা ১৫ দিনে একবার করা হয়েছে।’
এদিকে, প্রিজন ভ্যানে গাদাগাদি করে যাতে কাউকে আদালতে নিয়ে যাওয়া না হয়, সে ব্যাপারে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা এসেছে। আজ রবিবার থেকে বন্দিকে আদালতে নেওয়া বন্ধ করা হচ্ছে।
কারা কর্মকর্তারা জানান, কোনো বিচারাধীন মামলার বন্দির জামিন শুনানি আদালতে তার অনুপস্থিতিতেই হবে। যদি তিনি জামিন পান, তবে কারা কর্তৃপক্ষ সে অনুসারে ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, কোনো প্রবাসফেরত ব্যক্তি যদি হোম কোয়ারেন্টিনের আদেশ না মানেন, তবে তাকে যেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া না হয়, সে অনুরোধ জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসফেরত ব্যক্তিরা যদি ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড পেয়ে কারাগারে আসে, তবে সেটা আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে।’