স্পেন থেকে কবির আল মাহমুদ:: যথাযোগ্য মর্যাদায় স্পেনে মহান শহীদ দিবস ও অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২০ পালন করা হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকালে দূতাবাসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে একুশের কর্মসূচি শুরু করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার। পরে সকাল ১১টায় দূতাবাস মিলনায়তনে একুশের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দূতাবাসের চার্জ ডি এ্যাফেয়ার্স এম হারুন আল রাশিদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দূতাবাস কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও গীতা পাঠ করেন শ্যামল তালুকদার।
এরপর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অতঃপর দিবসটি উপলক্ষে দেয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের চার্জ ডি এ্যাফেয়ার্স এম হারুন আল রাশিদ, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন বাণিজ্যিক সচিব রেদোয়ান আহমেদ,পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব (শ্রম) মো. মোতাসিমুল ইসলাম এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দ্বিতীয় সচিব তাহসিনা আফরিন শারমিন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দূতাবাসের চার্জ ডি এ্যাফেয়ার্স এম হারুন আল রাশিদ সমবেত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও সকল ভাষা সৈনিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বদানকারী ও এ কারণে তার কারাবরণের কথা বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন।
একুশের আলোচনায় প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার তার বক্তব্যের প্রথমেই বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনে সকল শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। ভাষাকে মায়ের মতো দেখতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, মাকে যেভাবে আমরা ভালোবাসি, সেভাবে বাংলা ভাষাকেও ভালোবাসলে আমাদের ভাষা সমুন্নত থাকবে। সবসময় বাংলা ভাষার চর্চ্চা চালিয়ে যেতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে যে উন্নয়নের রুল মডেল হয়েছে, তার বড় একটা ভিত্তি, বড় বাহক হচ্ছে আমাদের ভাষা।
রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার ইউনেস্কো কর্তৃক মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অফিস-আদালত, কোট-কাচারী সকল ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সকল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান।
একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির নিমিত্ত প্রধানমন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, দূতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ, স্পেন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ,এবং স্পেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিগণ এবং স্প্যানিশ নাগরিক ও বিদেশী অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের উপর নির্মিত ১টি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ,সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে ধন্যবাদ ও বাংলাদেশী খাবার আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।