মাধবপুর থেকে লিটন পাঠান: নারী দিবস প্রতিবছরই আসে। শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা প্রভৃতি আয়োজনে পালন করা হয়ে থাকে নারী দিবসটি। কিন্তু বাগানে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে যে সকল নারীরা কাজ করেন। তাদের বৈষম্য দুর হয় না কখনো।
মাধবপুর উপজেলায় ৫টি চা বাগানের নারী চা শ্রমিকরা ৮ ঘন্টায় মজুরী পাচ্ছেন ১০২ টাকা। নারী চা শ্রমিকরা বাগানের টিলায় টিলায় রোদে পুড়ে বষ্টিতে ভিজে প্রধান শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
অপরদিকে পুরুষ শ্রমিকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করেন কারাখানায়। পুরুষের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় বেশি কাজ করেও নারীদের আয় পুরুষের সমান। দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করে আয় ১০২ টাকা। কিন্তু সে টাকাও নারী নিজের হাতে পান না। বাগান কর্তৃপক্ষের কাজ থেকে নারী শ্রমিকদের পক্ষে তাদের স্বামী বা পরিবারের পুরুষ প্রতিনিধিই মজুরীর টাকা উত্তোলন করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, মাধবপুরে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী চা শ্রমিক। বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে নারী শ্রমিকরা জানান, প্রতিদিন তারা ৮ ঘন্টা কাজ করেন।
পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করেন ৩ থেকে ৪ ঘন্টা অথচ উভয়ই মজুরী সমান চা বাগানের শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০ কেজির অধিক চা পাতা উত্তোলন করলে প্রতি কেজির বিপরীতে একজন শ্রমিককে ৫ টাকা করে বাড়তি দেয়ার কথা। তবে এক্ষেত্রে নারীদের কম দেয়া হয় বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। পুরুষ শ্রমিকরা পদোন্নতি পেয়ে সর্দার হলেও নারী শ্রমিকদের সাধারণ পদোন্নতি দেয়া হয় না বলে জানান তারা।
এছাড়া মাতৃত্বকালীন সময়েও বঞ্চনার স্বীকার হন নারী শ্রমিকরা। সুরমা চা বাগানের প্রদীপ গৌড় বলেন, বাগানে নারীরা বেশী পরিশ্রম করেন অথচ মজুরী পান পুরুষের সমান। আবার অতিরিক্ত চা পাতা উত্তোলন করেও নির্ধারিত বোনাস পান না।
চা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন স্বপন সাওতাল তিনি জানান দেশের সব চা বাগানেই প্রধান শ্রমিক মূলত নারীরা। অপরদিকে পুরুষরা অনেক সময় কাজে ফাঁকি দিলেও নারীরা তা করেন না। সে হিসেবে বেশী হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু উভয়েই মজুরী সমান। তারপরও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের মজুরীর টাকা তাদের স্বামীদের মাধ্যমেই উত্তোলন করা হয়।
আর তারাই ইচ্ছে মত খরচ করেন এ টাকা। নিজেদের টাকা সাধারণত নারীরা ব্যয় করতে পারেন না। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে চা শ্রমিক পরিবারের নারীরা উপেক্ষিত থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে নারী শ্রমিকদের জীবনকাল।