আজ শুক্রবার, ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি, বিকাল ৩:৫৬

কুয়ার ভেতরে মিলল বিপন্ন প্রাণী ‘বনরুই’

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত মার্চ ৪, ২০২০, ০৭:৫০ অপরাহ্ণ
কুয়ার ভেতরে মিলল বিপন্ন প্রাণী ‘বনরুই’

নিজস্ব প্রতিবেদক:: ‘রুই’ মাছের মতো দেখতে লাগায় তার নাম পড়ে গেছে ‘বনরুই। এরা বিপদ দেখলে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। বনরুই এশিয়া মহাদেশ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। পৃথিবীতে ৭ প্রজাতির বনরুই রয়েছে, তন্মধ্যে এশিয়ায় আছে ৪ প্রজাতির। এশীয় বনরুইদের ৩ প্রজাতিই বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

এই মহাবিপন্ন বনরুই মিলল কুয়াতে। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা বাগান। ভারত সীমান্ত ঘেষা এই বাগান এর শ্রমিক ও আশপাশের এলাকার লোকজন কিছুদিন পূর্বেও পানীয় জলের জন্য ব্যবহার করত পাতকুয়া। সম্প্রতি সেখানে নলকূপ বসার পর লোকজন আর কুয়ার পানি ব্যবহার করে না। তবে কুয়াগুলো এখনও দৃশ্যমান এবং সেগুলোতে পানি জমানো থাকে।

বুধবার সকাল ৮টায় ওই বাগানের গোলটিলা এলাকার রিক্সাচালক উসমান আলী ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে যখন হাত মুখ ধোয়ার জন্য নলকূপে যান তখন পাশেই থাকা কুয়ার মাঝে নড়াচড়ার শব্দ শোনেন। কিছুটা ভয় আর কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যান কুয়ার কাছে। গিয়ে দেখেন একটি অপরিচিত প্রাণী কুয়ার ভেতর নড়াচড়া করছে। এরপর সবাইকে নিয়ে খুন্তি দিয়ে মাটি খুড়ে কুয়ার ভেতর থেকে উপরে নিয়ে আসেন প্রাণীটি। এই প্রাণীটি হলো মহাবিপন্ন প্রাণী বনরুই।

কিছু ভণ্ড কবিরাজ বনরুই মেরে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে তথাকথিত ওষুধ তৈরির নাম করে ব্যবসা ফাঁদছে। যদিও এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল।

পরে সেটির কোমরে রশি বেঁধে বাড়ীর আঙ্গিনায় আটকে রাখেন তিনি। মুহূর্তেই খবরটি রটে গেলে তার বাড়ীতে শত শত লোকজন এসে ভিড় জমায় প্রাণীটিকে এক নজর দেখার জন্য। তবে শিশুদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ।

রিক্সা চালক উসমান আলী বলেন ‘আমি কুয়ার মাঝে শব্দ ও নড়াচড়া দেখে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখি এটি আক্রমণ না করে মাথা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। সবাইকে নিয়ে মাটি খুঁড়ে এটিকে ওপরে নিয়ে আসি। এটি দেখতে খুবই সুন্দর। লোকজন দেখে অনেক আনন্দ পেয়েছে। এর ওজন ৫ কেজি এবং ৪ ফুট লম্বা হবে।’

আরও পড়ুন:  করোনায় আক্রান্ত মাধবপুরের এসিল্যান্ড আয়েশা আক্তার

নালুয়া চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের মেম্বার নটবর রুদ্র পাল বলেন ‘এই প্রাণী আমার জীবনেও দেখিনি। আমি জানার পর সবাইকে বলেছি যাতে কেউ এটিকে আঘাত না করে। এটিকে সুস্থ অবস্থায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এদিকে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে নালুয়া চা বাগানে উপস্থিত হয়ে বনরুইটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে সেটিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, হবিগঞ্জ বন বিভাগের ডেপুটি ফরেস্টার রেহান মাহমুদ, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ অফিসার আব্দুল মোতালেব ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান কো-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল কালাম।

হবিগঞ্জ বন বিভাগের ডেপুটি ফরেস্টার রেহান মাহমুদ জানান, সুস্থ অবস্থায় বনরুইটিকে উদ্ধার করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছে। মুহূর্তের মাঝেই এটি গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যায়। প্রাণীটি বিপন্ন। এক সময় চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড় ও বনাঞ্চলে এটি প্রচুর পরিমাণ দেখা যেত।

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০