আজ সোমবার, ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি, সকাল ৮:৫৩

পাপিয়ার ‘কেলেংকারী’ ভিডিও ফাঁস!

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০, ১০:০৩ অপরাহ্ণ
পাপিয়ার ‘কেলেংকারী’ ভিডিও ফাঁস!

সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: বর্তমান সময়ের ঝড় তোলা নাম শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। গাড়ি ব্যবসার আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার অপরাধে তার স্বামীসহ চার জনকে তিন মামলায় পাঁচ দিন করে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অসহায় নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দেহ ব্যবসা, বিদেশে অর্থপাচার, মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তার এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে, যেটা মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি কক্ষে খাটের ওপর বসে আছেন পাপিয়া। মাথা দিয়ে মোবাইল ঘাড়ের সঙ্গে চেপে কারো সঙ্গে কথা বলছেন। একইসঙ্গে ডান হাত দিয়ে ব্লেড ধরে নিজের বাঁ হাত কাটছেন তিনি। এর মাঝে ব্লেডও পরিবর্তন করেন। সে সময় কাটা হাত দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা যায়।

https://youtu.be/NHw39sjzois

একজনকে ডেকে ব্যান্ডেজ দিতে বলেন তিনি। তাকে কোনো একটি ড্রয়ারে ব্যান্ডেজের খোঁজ করতে বলেন পাপিয়া। তায়্যিবা তার সহযোগী। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পাপিয়ার অপকীর্তি নিয়ে তোলপাড় চলছে সারাদেশে। মুখরোচক গল্প এখন শুধু এক পাপিয়াতে সীমাবদ্ধ নেই, আলোচনায় এসেছে অনেক রথী-মহারথীর নাম। ভাইরাল হয়েছে তার সঙ্গে ফ্রেমবন্দি অনেক ছবি। পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনের একাধিক মোবাইল ফোনের কললিস্ট, কলরেকর্ড, ভিডিও ক্লিপস ও ছবির সূত্রে শত শত নারী-পুরুষের সম্পৃক্ততার ক্লু মিলেছে। আটকের পর র‌্যাব ও পুলিশ হেফাজতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওয়েস্টিনের রেজিস্ট্রার ও সিসিটিভির ফুটেজে রয়েছে ওই স্যুটে কারা যাতায়াত করত, তার রেকর্ড। সবমিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের হাতে এখন হাইপ্রোফাইল কয়েক ডজন নারী-পুরুষের নাম। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানতে চাইলে র‌্যাব-১ অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘পাপিয়াসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাদের কাছে যা যা তথ্য ছিল সবই প্রকাশ করেছি। তাদের রিমান্ডে এনেছে পুলিশ। তবে আমরা চাচ্ছি মামলাগুলো তদন্ত করতে। কারণ তাদেরকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। পাপিয়া ও তার স্বামীর সঙ্গে আরও কে কে আছে এসব বিষয় খুঁজে বের করবো।’

আরও পড়ুন:  পূর্বে যা হয়নি, শোকাবহ আগস্টে তাই করে দেখিয়েছে মহানগর যুবলীগ: নাদেল

জাল মুদ্রা সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীমা নূর পাপিয়া দাবি করেছেন তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, তারকা হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট বুকিং করে যে রংমহল গড়ে উঠেছিল তাতে কাদের যাতায়াত ছিল সেই তালিকা দীর্ঘ। পাপিয়া ও তার স্বামীর দৈনন্দিন অর্থ ব্যয়ের অঙ্ক দেখলে ধারণা করা যায় সেখানে যারা যেতেন তাদের কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হতো। তাদের নেটওয়ার্কে বড় মাপের অনেক ব্যবসায়ী, ধনীর দুলালের নাম যেমন রয়েছে তেমনিভাবে রয়েছে অনেক সেলিব্রেটি তরুণীর নাম। মডেল ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকের সঙ্গে সখ্য ছিল পাপিয়ার। তারাও যেতেন ওয়েস্টিনের স্যুটে। সেখানে অনেক ব্যবসার দেনদরবার, তদবির ও লেনদেন হতো। পাপিয়া চক্রের অনেকে দাঁবড়ে বেড়ায় সচিবালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে। তারা নিয়োগ, বদলিসহ নানাবিধ তদবির বাণিজ্যে ব্যস্ত সময় পার করে। সন্ধ্যার পরও এদের অনেকে ‘ঢু’ মারে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তার খাস কামরায়। তাদের নামে ইস্যু হয় বিশেষ পাস।

বিডি স্কট সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি নেটওয়ার্ক আছে পাপিয়ার। তাতে বিদেশি সুন্দরী তরুণীরাও আছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদের দিয়ে মনোরঞ্জন করে মন যুগিয়েছেন ওপরওয়ালাদের। সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ ছিল তার।

উত্তরা জোনের পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, শুধু তারকা হোটেল নয়, বাগানবাড়ি, বাংলো বাড়ি, ডুপ্লেক্স ও রিসোর্টে রয়েছে রংমহল। ঢাকার আশপাশে সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে এমন অনেক রংমহলে রয়েছে জলসা ঘর। আলো আধারির খেলায় সেখানে জমে উঠে মদের আসর। সাভারের মধুমতি মডেল টাউনের ভেতরে তিনটি রিসোর্টে রংমহল গড়ে উঠার কাহিনী ওপেন সিক্রেট।

বাইপাইলে এক অভিনেতার বাগান বাড়িতে রয়েছে জলসা ঘর। মধ্য গাজীরচটেও রয়েছে জলসা ঘর। উত্তরার পাশে তুরাগে রিসোর্টের আড়ালে চলছে উন্মদনা। বিনোদন কেন্দ্র ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক ও আলাদীন পার্কে রাত্রী যাপনের নামে অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও নাচগানের আসরের খবর পাওয়া যায় প্রায়ই। পুলিশ ওইসব স্থানে একাধিকবার অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি অপকর্ম। গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্টের রাতের চিত্র ভিন্ন। পূর্বাচল ও ৩শ ফিটের আশপাশে গড়ে উঠা অনেক রিসোর্টের আড়ালে চলছে মনোরঞ্জনের আয়োজন। মানিকগঞ্জের কয়েকটি রিসোর্টের রাতের আড্ডায় থাকে মদ-নারী ও নাচ-গানের আসর।

আরও পড়ুন:  লুর চিঠির জবাবে যা বললো আওয়ামী লীগ

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাপিয়া ওরফে পিউ জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, এক শীর্ষ কর্মকর্তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওয়েস্টিনে। নিয়মিত সকালের নাশতা ও মধ্য রাত পর্যন্ত তিনি থাকতেন ওয়েস্টিনে। পাপিয়া বেশ কিছু দিন আগে রাশিয়া থেকে ১২ নারীকে ঢাকায় এনেছিলেন। যাদের বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়। কিন্তু ওই শীর্ষ কর্মকর্তা তাদের ছেড়ে দেন। তিনি নিয়মিত পাপিয়ার মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সরকারদলীয় নেতা, কয়েকজন মন্ত্রীকে নারী সরবরাহ করতেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে অবস্থান করে সুন্দরী যুবতীদের দিয়ে পাপিয়া পরিচালনা করতেন অবৈধ দেহব্যবসা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও তার স্বামী অনেক অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। কারো মাধ্যমে কোনো কাজ হাসিল করতে চাইলে সুন্দরী যুবতীদের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে পাপিয়া কৌশলে তার ডেরায় নিয়ে আসতেন। পরে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ক্লিপসের ভয় দেখিয়ে টার্গেট পূরণ করতেন তিনি। মানসম্মানের ভয়ে ওই ব্যক্তিরাও পাপিয়ার নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সাহস দেখাতেন না। এরই মধ্যে পাপিয়া-সুমন দম্পতি তাদের ব্যবসার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছেন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক ভিডিও ক্লিপসের একটি টিকটক ভিডিও। ওই ক্লিপসে দেখা যায়, পিস্তল হাতে পাপিয়া এক যুবককে টার্গেটে রেখে গুলি করার অভিনয় করছেন। এ ছাড়া তার অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও রয়েছে, যা তদন্ত কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন। হোটেল ওয়েস্টিনের সুইমিংপুলে ৫ যুবতী নিয়ে পাপিয়ার জলকেলি দেখা গেছে একটি ভিডিও ক্লিপে। এসব কিছুই খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

একাধিক সূত্র বলছে, পাপিয়াকে নিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কারণ, পাপিয়াকে কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, কারা বিভিন্ন কমিটিতে বড় পদ পাইয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছেন এবং কারা পাপিয়ার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন এর সব তথ্য এখন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। কীভাবে পাপিয়ার উত্থান হয়েছে সে বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছে। তবে এরই মধ্যে পাপিয়া অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের নাম বলেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন সাধারণ পরিবারের সন্তান হলেও দুজনের মধ্যেই কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল মনোভাব ছিল। পাপিয়ার রাজনৈতিক পদচারণার পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতারই হাত ছিল। ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করে তার কাছ থেকে অনেকেই ফায়দা লুটেছেন। আর পাপিয়াও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সবার ‘চাহিদা’ পূরণ করেছেন। বেপরোয়া আচরণের জন্য তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল একটি মহল। এজন্য তার ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটেছিল।

আরও পড়ুন:  'মোগলবাজারে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু'

ব্যবসাবাণিজ্য থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় নেতা, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে পাপিয়ার। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের বশে আনার জন্য পাপিয়া ‘এসকট সার্ভিসের’ ব্যবসা শুরু করেন। এজন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের গরিব ঘরের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে এনে জোরপূর্বক ‘অনৈতিক কাজে’ বাধ্য করতেন। তদবির বাণিজ্য হাসিলের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে কমবয়সী তরুণীদের পাঠিয়ে দিতেন তিনি। এভাবে অল্প দিনেই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাপিয়া মুসলিম ধর্মের অনুসারী হলেও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল কালী মন্দিরে। এর বাইরেও তিনি শিব লিঙ্গের পূজা করতেন। গ্রেফতারের পর দেখা যায়, পাপিয়ার এক হাতে কাবার ছবি, অন্য হাতে মন্দিরের ছবি আঁকা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রাজনীতিতে উত্থানের নিয়ামক হিসেবে দুজন প্রভাবশালী নেত্রীর নাম বলেছেন পাপিয়া। পরবর্তীতে তারাও নিয়মিতভাবে পাপিয়ার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। তাদের একজন তার ব্যবসায়িক পার্টনারও। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের জন্য সুন্দরী তরুণী সরবরাহ করতে পাপিয়ার সহায়তা চাইতেন অনেকে। সেখানেই ওই প্রভাবশালীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ধারণ করে রাখতেন তিনি। পরবর্তীতে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করতেন তিনি।

সূত্রঃ পূর্বপশ্চিম

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১