সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: কুয়াশার অজুহাত দেখিয়ে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বিমান। এরপর প্রবাসীরা এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেন। প্রবাসীদের দাবির মুখে প্রায় বছর তিনেক পর লন্ডন-সিলেট সরাসরি ফ্লাইট চালু হলেও সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট এখনো বন্ধ রয়েছে।
সিলেট-লন্ডন ও সিলেট-ম্যানচেস্টার সরাসরি ফ্লাইট চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি) ইউকে’র প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে। আগামী ৮ মার্চ ডিএফটি’র প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। ৯ ও ১০ মার্চ তারা ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। তাদের পরিদর্শন রিপোর্টের ওপর সিলেট থেকে এ দুটি রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন বিমান সূত্র।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো: মোকাব্বির হোসেন জানান, ডিএফটি’র প্রতিনিধি দল ৮ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবে। সফরকালে তারা সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনের পর তারা ক্লিয়ারেন্স (ছাড়পত্র) দিলে এ রুটে ফ্লাইট চালু করা যাবে। এ ব্যাপারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে রেস্ট্রিকশন (বিধি নিষেধ) দেবেন তা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বিমানের সিইও বলেন, তা না হলে সিলেট অঞ্চলের যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই, এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিমানের সিইও আরো জানান, রানওয়ে সমস্যার কারণে ওসমানী বিমানবন্দরে সুপরিসর এয়ারক্রাফট নামতে কিছুটা সমস্যা হয়। এ জন্য ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রানওয়ের সম্প্রসারণ কাজ আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট থেকে আমরা লন্ডন ও ম্যানচেস্টার ছাড়াও অন্যান্য রুটেও ফ্লাইট অপারেট করতে চাই। রানওয়ের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে এবং ডিএফটি’র ছাড়পত্র পেলে মে মাসে তারা সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবেন বলে জানান সিইও।
এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মো: মাহবুব আলী বলেন, সিলেট বিমানবন্দরে যাতে ৭৭৭ এবং ড্রিমলাইনার নামতে পারে-সেজন্য রানওয়ের স্ট্রেনথ (প্রশস্থতা) বাড়ানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আমরা সামগ্রিক অর্থে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রুপ দিতে চাই।
সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন আহমদ জানান, বাংলাদেশের মীর আক্তার গ্রুপ এবং কোরিয়ান হাল্লা গ্রুপ ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনি জানান, প্রস্তাবনা অনুযায়ী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। তবে, এর আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
বাংলাদেশ বিমানের জেলা ব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজ মজুমদার জানান, ডিএফটি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আগামী ৯ ও ১০ মার্চ সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মূলত এ বিমানবন্দরের সিকিউরিটি ডাটা সংগ্রহ করবেন। তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশন (শর্তাবলী)-এর সাথে এ বিমানবন্দরের পরিচালনাগত মিল রয়েছে কিনা তা তারা খতিয়ে দেখবেন। নতুন এ দুটি রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি তাদের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, এপ্রিলে না হলেও মে’র প্রথম সপ্তাহে এ দুটি রুটে তাদের ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরো বলেন, সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বিমানের ওয়েবসাইটে আগামী ৮ জুলাই থেকে ফ্লাইট পরিচালনার শিডিউলও দেয়া হয়েছে।
কুয়াশার অজুহাত দেখিয়ে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বিমান। এরপর প্রবাসীরা এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেন। প্রবাসীদের দাবির মুখে প্রায় বছর তিনেক পর লন্ডন-সিলেট সরাসরি ফ্লাইট চালু হলেও সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট এখনো বন্ধ রয়েছে।
১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করা হয়। কিন্তু রিফুয়েলিং ব্যবস্থা না থাকায় বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর কোন উড়োজাহাজের ফ্লাইট ওসমানীতে অবতরণ করেনি। ২০১৫ সালে প্রায় ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হয় রিফুয়েলিং স্টেশন। বর্তমানে সিলেট বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন-সিলেট, জেদ্দা-সিলেট এবং দুবাই-সিলেট ফ্লাইট অপারেট হচ্ছে বলে বিমান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।